আয়ারল্যান্ড হচ্ছে উত্তর-পশ্চিম ইউরোপে অবস্থিত একটি দ্বীপ রাষ্ট্রের নাম । বর্তমানে এখানে বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন । অনেকে পড়াশোনা করছেন, চাকরি করছেন আবার কেউ কেউ ভ্রমণ করছেন । তাই আমরা জানতে চাই আয়ারল্যান্ড যেতে কত টাকা লাগে ।
আপনি যদি ইউরোপের যতগুলো উন্নত দেশ রয়েছে সেগুলোর সাথে বিবেচনা করেন তাহলে আয়ারল্যান্ড অন্যতম ধনী একটি দেশ । শুধু ইউরোপ বললে ভুল হবে সারা বিশ্বের অন্যতম উন্নত দশটি দেশের মধ্যে আয়ারল্যান্ডের নাম অবশ্যই রয়েছে । এদের মাথাপিছু আয় তুলনামূলক অনেক উঁচু পর্যায়ের ।
আমাদের বেশিরভাগ মানুষের স্বপ্ন হচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাওয়া এবং সেখানে গিয়ে অর্থ উপার্জন করা । মূলত আপনি যদি ইউরোপের দেশগুলোতে আসতে পারেন তাহলে শুরুতে উচ্চ বেতন চাকরি করার সুযোগ রয়েছে । পাশাপাশি আপনি এখানে এসে উন্নত জীবন যাপনও করতে পারছেন ।
আপনার চিন্তাভাবনা যদি থাকে বিদেশ গিয়ে অর্থ উপার্জন করবেন এবং সেটা হতে পারে মোটা অংকের তাহলে অবশ্যই আয়ারল্যান্ড আসতে পারেন । এখানে আপনার পার্ট টাইম চাকরি থেকে শুরু করে ফুল টাইম চাকরির ব্যবস্থা রয়েছে । মূলত আপনার কাজের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন চাকরির ব্যবস্থা আপনি পেতে পারেন ।
এখন আমরা আয়ারল্যান্ড কাজের ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানবো । আপনি যদি ইতিমধ্যে এই বিষয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে পোস্টটি আপনার জন্য তৈরি করা হয়েছে । তাই অবশ্যই চেষ্টা করবেন মনোযোগ সহকারে পোস্টটি পড়ার জন্য । তো চলুন শুরু করা যাক ।
আয়ারল্যান্ড যেতে কত টাকা লাগে
বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে আয়ারল্যান্ড যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরির উপর ভিসা পাওয়া যায় । এখানে মূলত ভিসার ক্যাটাগরির উপর ভিত্তি করে যাওয়ার খরচের পরিমাণ নির্ধারণ করা যায় । বর্তমানে আয়ারল্যান্ড যাওয়ার জন্য তিন ধরনের ক্যাটাগরির ভিসা পাওয়া যায় । সেগুলো হচ্ছে আয়ারল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা, আয়ারল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসা এবং আয়ারল্যান্ড টুরিস্ট ভিসা ।
আপনি সরকারি এজেন্সি ব্যবহার করে আয়ারল্যান্ড গেলে খরচ তুলনামূলক কম হবে । কিন্তু আপনি যদি বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে আয়ারল্যান্ড যান তাহলে কিন্তু তুলনামূলক খরচ বেশি এ সম্পর্কে আমরা মোটামুটি সকলের কমবেশি ধারণা রয়েছে । তাই আপনাকে সরকারি না বেসরকারি যে কোন একটি মাধ্যম বাছাই করতে হবে ।
আরও পড়ুন ➝ মালয়েশিয়া ভিসার দাম কত
বিভিন্ন অনলাইন ট্রাস্টেড সোর্সের বরাত অনুযায়ী আমরা জানতে পারি বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে আয়ারল্যান্ড যেতে ১০ লাখ টাকা থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে । আবার সরকারি অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমে আয়ারল্যান্ড যেতে আপনার খরচ হতে পারে ৮ লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ।
কিন্তু বর্তমানে অফ সিজনে আয়ারল্যান্ড গেলে খরচ কিছুটা কম হয় । সাধারণত অফ সিজনে আয়ারল্যান্ড যেতে ৭ লাখ টাকা থেকে ৯ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়ে থাকে । তাছাড়া আপনার পরিচিত কেউ যদি ইতিমধ্যে আয়ারল্যান্ড অবস্থান করে থাকে তাহলে ওনার রেফারেন্সে গেলে খরচ তুলনামূলক অনেক কম হবে ।
আয়ারল্যান্ড ভিসা পেতে কি কি লাগে
আমরা যদি কখনো বাংলাদেশ থেকে আয়ারল্যান্ড যেতে চাই তাহলে প্রথমে আয়ারল্যান্ড ভিসা তৈরি করতে হবে । আয়ারল্যান্ডের ভিসা পেতে হলে আপনার প্রথমে বেশ কিছু কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে । মূলত ওই সকল কাগজপত্র ব্যবহার করার মাধ্যমে আয়ারল্যান্ড ভিসা প্রসেসিং করা হয়ে থাকে ।
সাধারণত আয়ারল্যান্ড ভিসা প্রসেসিং করার জন্য আমাদের নিজে থেকে কিছু করার দরকার নেই । যা যা করার দরকার আপনার বাছাইকৃত এজেন্সি করে দেবে । কিন্তু আপনাকে মূলত কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হবে এজেন্সির কাছে । এখন ওই সকল কাগজপত্রগুলো নিচে তুলে ধরা হলো ।
- বৈধ বাংলাদেশী পাসপোর্ট
- জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি
- পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট ফটোকপি
- করোনা ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট
- মেডিকেল রিপোর্ট সার্টিফিকেট
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ভেরিফিকেশন
আমরা যদি আয়ারল্যান্ড ভিসা প্রসেসিং করতে চাই তাহলে প্রথমে উল্লেখিত কাগজপত্রগুলো সংগ্রহ করব । অতঃপর কাঙ্খিত ভিসা এজেন্সির কাছে এই কাগজপত্রগুলো জমা দিব । উল্লেখ্য এই কাগজপত্রগুলো ছাড়াও যদি আরো কোন বাড়তি কোন কাগজপত্র দরকার হয় তাহলে অবশ্যই সেখানকার এজেন্সি কর্তৃপক্ষ আপনাকে জানিয়ে দিবে ।
আয়ারল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৫
আমরা বেশিরভাগ মানুষের উদ্দেশ্য হচ্ছে আয়ারল্যান্ড গিয়ে কাজ করা । তাই আমাদের আয়ারল্যান্ড কাজের ভিসা দাম কত এই বিষয় সম্পর্কে জানার বেশি আগ্রহ । আপনি আয়ারল্যান্ড কোন কাজে যাবেন মূলত তার উপর ভিত্তি করে খরচের পরিমাণ নির্ধারণ করা যায় । বর্তমানে আয়ারল্যান্ডে বিভিন্ন ক্যাটাগরির কাজের ভিসা পাওয়া যায় ।
আরও পড়ুন ➝ সিঙ্গাপুর ভিসার দাম কত
আমরা এখন আয়ারল্যান্ড কাজের ভিসার দাম কত এই বিষয় সম্পর্কে জানব । আপনাদের সুবিধার্থে আমরা একটি ছক তৈরি করেছি । এখন ওই ছকের মধ্যে আয়ারল্যান্ড কাজের ভিসার দাম কত সেই সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে ।
ভিসার ধরন | ভিসার দাম |
---|---|
ড্রাইভিং ভিসা | ৪,৫০,০০০ – ৫,০০,০০০ টাকা |
বিজনেস ভিসা | ৪,০০,০০০ – ৫,০০,০০০ টাকা |
ক্লিনার ভিসা | ৩,০০,০০০ – ৫,০০,০০০ টাকা |
সাধারণত আয়ারল্যান্ড ড্রাইভিং ভিসার দাম ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত, আয়ারল্যান্ড বিজনেস ভিসার দাম ৪ লাখ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত এবং আয়ারল্যান্ড ক্লিনার ভিসার দাম ৩ লাখ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ।
বিভিন্ন অনলাইন ট্রাস্টের সোর্সের তথ্য অনুযায়ী উল্লেখিত আয়ারল্যান্ড কাজের ভিসা দাম তুলে ধরা হয়েছে । কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এবং চাহিদার কথা বিবেচনা করে এই ভিসাগুলোর দাম কিছুটা বেশি অথবা কম হতে পারে ।
আয়ারল্যান্ড কাজের বেতন কত
আয়ারল্যান্ড বর্তমান বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ । তাই এখানে কাজের বেতন অন্য দেশ থেকে তুলনামূলক অনেক বেশি হয় । আয়ারল্যান্ডের বিভিন্ন কাজের উপর ভিত্তি করে বেতনের পরিমাণ নির্ধারণ করা যায় । তবে বর্তমানে আয়ারল্যান্ডে কাজের বেতন প্রতি ঘন্টায় ১২.৭০ ইউরো হয়ে থাকে এবং প্রতিদিন সর্বনিম্ন ৮ ঘন্টা পর্যন্ত ডিউটি করতে হয় ।
এই হিসাব করলে প্রতি মাসে আপনার বেতন গিয়ে দাঁড়ায় ২০৩০ ইউরোর বেশি । আমরা যদি বাংলা টাকায় কনভার্ট করি তাহলে দাঁড়াই ২ লাখ ৬৭ হাজার টাকার বেশি । আয়ারল্যান্ড সর্বনিম্ন কাজের বেতন ২ লাখ ৬৭ হাজার টাকার উপরে সব সময় হয়ে থাকে ।
কিন্তু আপনি যদি কোন একটি বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করে আয়ারল্যান্ড আসেন তাহলে আপনার বেতনের পরিমাণ আরো অনেক বেশি হবে । এক্ষেত্রে শুরুতে আপনার আয়ারল্যান্ড কাজের বেতন ৩ লাখ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে । তাই অবশ্যই চেষ্টা করবেন অভিজ্ঞতা অর্জন করে আয়ারল্যান্ড আসার জন্য ।
বাংলাদেশ থেকে আয়ারল্যান্ড যাওয়ার উপায়
আমরা অনেকে বাংলাদেশ থেকে আয়ারল্যান্ড যেতে চাই কিন্তু কিভাবে যাওয়া যায় সেই সম্পর্কে অনেকে জানিনা । আপনি যদি কখনো বাংলাদেশ টু আয়ারল্যান্ড যেতে চান তাহলে প্রথমে সম্পূর্ণ বৈধ বাংলাদেশী পাসপোর্ট তৈরি করতে হবে । তারপর আপনাকে বিশ্বস্ত এজেন্সির মাধ্যমে অথবা সরকারি এজেন্সির মাধ্যমে আয়ারল্যান্ড ভিসা তৈরি করতে হবে ।
তাছাড়া আপনার পরিচিত কোন ব্যক্তি যদি ইতিমধ্যে আয়ারল্যান্ড অবস্থান করে থাকে তাহলে উনার রেফারেন্সে আপনি আয়ারল্যান্ড ভিসা পেতে পারেন । আপনি যদি কাজের উদ্দেশ্যে আয়ারল্যান্ড যেতে চান তাহলে আয়ারল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসা সংগ্রহ করতে হবে । অন্য কোন ভিসায় আপনি কিন্তু আয়ারল্যান্ডে কাজ করতে পারবেন না ।
আপনার উদ্দেশ্য যদি হয় আয়ারল্যান্ড গিয়ে কাজ করে তাহলে অবশ্যই সেখানকার স্থানীয় কোন কোম্পানি থেকে আপনার চাকরির প্রস্তাব পেতে হবে । অতঃপর সেখানকার নিয়োগকর্তার মাধ্যমে আয়ারল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আপনাকে আবেদন করতে হবে ।
আপনি যদি আয়ারল্যান্ড ওয়ার্ক পারমিট ভিসার অনুমতি পেয়ে যান তাহলে আয়ারল্যান্ড দূতাবাসে যোগাযোগ করতে হবে । আপনি যদি কোন ভিসা এজেন্সির মাধ্যমে এই কাজটি করেন তাহলে আপনাকে আয়ারল্যান্ড দূতাবাসের যোগাযোগ করার দরকার নেই । যা যা করা দরকার আপনার বিশ্বস্ত এজেন্সি সবকিছু করে দিবে ।
আয়ারল্যান্ড সম্পর্কিত জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্ন
আয়ারল্যান্ড সর্বনিম্ন বেতন কত?
আয়ারল্যান্ডে সর্বনিম্ন বেতন হচ্ছে ২ লাখ ৬৭ হাজার টাকার উপরে ।
আয়ারল্যান্ডের মুদ্রার নাম কি?
আয়ারল্যান্ডের মুদ্রার নাম হচ্ছে ইউরো ।
বাংলাদেশ থেকে আয়ারল্যান্ড দূরত্ব কত কিলোমিটার?
বাংলাদেশ থেকে আয়ারল্যান্ড দূরত্ব হচ্ছে ৮৪২৫ কিলোমিটার ।
আয়ারল্যান্ডে কোন কাজে চাহিদা বেশি?
বর্তমানে আয়ারল্যান্ডে কৃষি খাত, শিক্ষা খাত, ড্রাইভিং, বিজনেস এবং ক্লিনার কাজে চাহিদা বেশি ।
আয়ারল্যান্ড যেতে কত সময় লাগে?
আয়ারল্যান্ড যেতে সর্বনিম্ন ১২ ঘন্টা থেকে সর্বোচ্চ ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে ।
আমাদের শেষ কথা
আজকের পোস্টে ইউরোপের অন্যতম শীর্ষ ধনী দেশ আয়ারল্যান্ড যেতে কত টাকা লাগে এই বিষয় সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে । তাছাড়া আয়ারল্যান্ডে কোন কাজের চাহিদা বেশি, বেতন কত টাকা, এবং যেতে কি কি লাগে ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কেও তথ্য তুলে ধরা হয়েছে । আপনি যদি কখনো আয়ারল্যান্ড যেতে চান তাহলে অবশ্যই উল্লেখিত তথ্য গুলো ফলো করতে পারেন ।
আশা করি আমার এই পোস্টটি পড়ে আপনার খুবই ভালো লেগেছে । সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার পর আপনি যদি সামান্যতম উপকার পান তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধব ও ফ্যামিলিতে পোস্টটি শেয়ার করুন । তাছাড়া আমার এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার যদি কোন মন্তব্য থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন । আজকের মত এখানেই শেষ করছি । সবাই ভালো থাকুন । সুস্থ থাকুন । আল্লাহ হাফেজ ।