প্রিয় পাঠক, আসসালামু আলাইকুম । কেমন আছেন সবাই? আমাদের অনেক ভাই ও বোন রোজা ভঙ্গের কারণসমূহ সম্পর্কে জানতে চান । আপনিও কি অনলাইনে এই বিষয়ে তথ্য খুঁজতেছেন? আপনার উত্তরটি যদি হ্যাঁ হয় তাহলে সঠিক জায়গায় এসেছেন । কারণ আমরা আজকের প্রশ্নের রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি সহ আরও বেশ কিছু তথ্য সম্পর্কে জানব ।
মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন আমাদের জন্য প্রতিবছর ৩০ দিন বা এক মাস রমজানের রোজার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন । এর মাধ্যমে আমরা নিজেদের ভিতরে সংযম তৈরি করতে পারি । বিভিন্ন রকম পাপাচার ও খারাপ কাজ থেকে রোজার সময় বিরত থাকতে পারি ।
দেখা যায় সারা বছর যে সকল মানুষ খারাপ কাজ ও বিভিন্ন গুনাহের কাজে লিপ্ত থাকে তারা রমজান মাসে ওই সকল পাপ থেকে বিরত থাকে । মূলত আমাদের পরিশুদ্ধ হওয়ার একটি সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন রমজান এর মাধ্যমে । তাই আমরা অবশ্যই রমজানের ৩০ টি রোজা রাখবো ।
কিন্তু আপনি যদি রোজা রাখতে চান তাহলে রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি এই বিষয় সম্পর্কে জানা দরকার । আপনি যদি এই বিষয় সম্পর্কে না জানেন তাহলে দেখা যাবে আপনার রোজা ভঙ্গ হয়ে গেছে । আপনি শুধু শুধু সারাদিন উপবাস থাকলেন এক্ষেত্রে আপনার কোন রকম সোয়াব লাভ হবে না ।
এখন আমরা রোজা ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানবো । আপনি যদি ইতিমধ্যে এই বিষয সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে পোস্টটি আপনার জন্য তৈরি করা হয়েছে । তাই পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন । তো চলুন শুরু করা যাক ।
রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ
মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর উম্মতের উপর রমজানে রোজা ফরজ করে দিয়েছেন । প্রতি বছর ৩০ দিন মহান আল্লাহকে রাজিও খুশি করার জন্য মাঝ রাতে উঠে সেহরি খেতে হয় এবং সারাদিন উপবাস থেকে সন্ধ্যার সময় ইফতার করতে হয় ।
আরও পড়ুন ➝ [২৫০+] আ দিয়ে মেয়েদের ইসলামিক নাম অর্থ সহ
কিন্তু এক্ষেত্রে আপনি শুধুমাত্র সারাদিন উপবাস থাকলেন তাহলে কিন্তু হলো না । বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে ওই গুলো যদি আপনি ফলো না করেন তাহলে কিন্তু আপনার রোজা ভঙ্গ হয়ে যেতে পারে । দেখা যায় আমরা বেশিরভাগ মানুষ রোজা ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে অতটা সচেতন নয় ।
একটা বিষয় ভাবুন আপনি সারাদিন উপবাস থাকলেন কিন্তু আপনার অজান্তে রোজা ভঙ্গ হয়ে গেল । এক্ষেত্রে আপনার শুধু শুধু কষ্ট করাটা বিফলে গেল । এর পরিবর্তে আপনি মহান আল্লাহর থেকে কোনরকম সোয়াব লাভ করতে পারলেন না । যা আপনার জন্য ক্ষতি কর ছাড়া আর কিছু নয় ।
ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক রোজা ভঙ্গের অসংখ্য কারণ রয়েছে । তবে তার মধ্যে বেশ কয়েকটি কারণ হচ্ছে ভুলবশত কিছু খাওয়ার পর রোজা ভেঙ্গে গেছে ভেবে ইচ্ছাকৃতভাবে আরো কিছু খাবার খাওয়া । মুখ ভর্তি করে বমি করা বা ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা এবং রোজা স্মরণ থাকা অবস্থায় অজুর সময় কুলি বা নাকে পানি নেওয়ার পর তা ভেতরে চলে যাওয়া ।
রোজা ভাঙ্গার কারণ কয়টি ও কী কী?
আমরা যদি রোজা রাখি তাহলে অবশ্যই জানা দরকার রোজা ভঙ্গের কারণ কতটি । আমরা ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক তথ্য অনুযায়ী জানতে পারি রোজা ভঙ্গের কারণ হচ্ছে ১৫টি । এখন আমরা রোজা ভঙ্গের ১৫টি কারণ কি কি তা জানবো আপনাদের সুবিধার্থে নিচে তা তুলে ধরা হলো ।
- ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা ।
- বমি মুখ পর্যন্ত আসার পর তা গিলে ফেলা ।
- নারীদের মাসিক বা সন্তান প্রসবের পর ঋতুস্রাব ।
- কেউ যদি ইসলাম ত্যাগ করে ।
- গ্লুকোজ, শক্তিবর্ধক ইনজেকশন বা সেলাইন গ্রহণ করা ।
- প্রস্রাব বা পায়খানার রাস্তা দিয়ে ওষুধ বা অন্য কিছু শরীরে প্রবেশ করানো ।
- কোনো ব্যক্তি রোজাদারকে জোরপূর্বক কিছু খাওয়ালে ।
- ভুলক্রমে ইফতারের সময় হয়েছে ভেবে সূর্যাস্তের আগে ইফতার করা ।
- মুখ ভরে বমি করা ।
- ভুলবশত কিছু খাওয়ার পর রোজা ভেঙে গেছে ভেবে ইচ্ছাকৃতভাবে আরও কিছু খাওয়া ।
- বৃষ্টির পানি মুখে পড়ার পর তা গিলে ফেলা ।
- কান বা নাক দিয়ে ওষুধ প্রবেশ করানো ।
- জিহ্বার মাধ্যমে দাঁতের ফাঁক থেকে ছোলা পরিমাণ কিছু বের করে খাওয়া ।
- সামান্য বমি মুখে আসার পর ইচ্ছাকৃতভাবে তা গিলে ফেলা ।
- রোজা স্মরণ থাকা অবস্থায় অজুর সময় কুলি বা নাকে পানি নেয়ার পর তা ভেতরে চলে যাওয়া ।
(সূত্র: ফাতাওয়ায়ে শামি ও ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি)
আপনি যদি একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন উল্লেখিত ১৫ টি কারণ থেকে নিজেকে সংযত রাখার জন্য । তাহলে আশা করা যায় আপনি অবশ্যই সহিহ মতে রোজা রাখতে পারবেন আপনার কোন রোজা ভঙ্গ হবে না ।
রোজা মাকরূহ হওয়ার কারণ কি কি
আমরা ইতিমধ্যে রোজা ভঙ্গ হওয়ার কারণ কতটি ও কি কি এই বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেছি । কিন্তু বেশ কিছু কারণে আপনার রোজা মাকরূহ হয়ে যেতে পারে । অতএব এই বিষয় গুলো সম্পর্কে আমাদের প্রথমে জানা দরকার যাতে আমাদের রোজার কোন ক্ষতি না হয় । অর্থাৎ আমরা পরিপূর্ণ রোজার সওয়াব লাভ করতে পারি সেই বিষয়ে সর্বোচ্চ সচেতনতা অবলম্বন করা উচিত ।
আপনি যদি রমজানের রোজা রাখেন আর সামান্য কিছু ভুলের কারণে আপনার রোজার ক্ষতি হয়ে গেল । অর্থাৎ আপনি অল্প পরিমাণ সওয়াব পেলেন বা সম্পূর্ণ রোজার সব পেলেন না । তাহলে এক্ষেত্রে আপনার ক্ষতি নিজের ক্ষতি নিজেই করলেন । তাই আমাদের রোজা মাকরূহ হওয়ার কারণগুলো সম্পর্কে জানা দরকার ।
এখন আমরা রোজা মাকরুহ হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানব । আপনাদের সুবিধার্থে রোজা মাকরূহ হওয়ার কারণগুলো নিচে তুলে ধরা হলো ।
রোজার কাজা ও কাফফারা কী?
আমরা অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভঙ্গ করে থাকি অথবা অনেকে দেখা যায় অসুস্থতার জন্য রোজা ভঙ্গ করে ফেলেন । কিন্তু আপনি যদি রমজানের রোজা ৩০ টি না পালন করে থাকেন অর্থাৎ যতটি রোজা ভেঙে ফেলেছেন ঠিক ততটি রোজার জন্য আপনাকে অবশ্যই কাজা বা কাফফারা আদায় করতে হবে নাহলে আপনি গুনাহগার হবেন ।
আপনি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে রমজানের কোন রোজা ভঙ্গ করেন তাহলে আপনাকে এক টানা ৬০টি রোজা রাখতে হবে । রোজা থাকাকালীন অবস্থায় যদি অসুস্থ থাকেন বা ঈদের কারণে আপনার রোজা ভঙ্গ হয়ে যায় তাহলে আবার নতুন করে পুনরায় এক টানা ৬০টি রোজা রাখতে হবে । অন্যথায় আপনার রোজার কাজ আবার কাফফারা আদায় হবে না ।
কিন্তু মহিলাদের ক্ষেত্রে যদি মাসিক শুরু হয় তাহলে একটানা ৬০টি রোজা পূর্ণ করতে হবে এমন কোন নিয়ম নেই । এক্ষেত্রে মাসিকের জন্য যদি আপনার যত গুলো রোজা ভঙ্গ হবে ঠিক পরবর্তী ধারাবাহিকভাবে এক টানা সব গুলো রোজা রাখতে হবে । তাহলে আপনার রোজার কাফফারা আদায় হয়ে যাবে ।
তবে আমরা অনেকে একটানা ৬০ রোজা রাখার মত সামর্থ্য নেই । তারা চাইলে গরিব অথবা মিসকিন কে খাওয়ানোর জন্য রোজার কাফফারা আদায় করতে পারেন । এক্ষেত্রে আপনাকে ৬০ জন গরীব অথবা মিসকিন কে দুবেলা পেট ভরে খাওয়াতে হবে । অথবা প্রতি গরিব অথবা মিসকিন কে ১ কেজি ৬০০ গ্রাম গম বা তার মূল্য পরিমান দান করতে হবে ।
আমাদের শেষ কথা
সম্মানিত পাঠক, আজকের পোস্টটিতে আমরা পবিত্র রমজানের রোজা ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি এই বিষয় সম্পর্কে জেনেছি । তাছাড়া রোজা ভঙ্গ হয়ে গেলে তার কাজা বা কাফফারা কিভাবে আদায় করতে হয় সেই বিষয় সম্পর্কেও আলোচনা করেছি । আপনি যদি কখনো রমজানের রোজা রাখেন বা রোজা ভঙ্গ করে ফেলেন তাহলে অবশ্যই উল্লেখিত তথ্য গুলো ফলো করে সকল কাজ সম্পন্ন করুন ।
আশা করি আমার এই পোস্টটি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে । সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার পর আপনি যদি সামান্যতম উপকার পান তাহলে অবশ্যই আপনার ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্টটি শেয়ার করুন । তাছাড়া চাইলে আপনার ব্যক্তিগত মতামত পোস্টের কমেন্টে জানাতে পারেন । অতএব আজকের মত এখানেই শেষ করছি । সবাই ভালো থাকুন । সুস্থ থাকুন । আল্লাহ হাফেজ ।