কানাডা ভিজিট ভিসা কিভাবে পাবেন এই প্রশ্নটি যখন আপনাকে করা হয় তখন সবার প্রথমে মাথায় আসে কানাডায় কেন ভিজিট করার জন্য আমরা যাব? প্রশ্নটির উত্তরে আসবে, উন্নত জীবনযাপন এবং বিলাসিতার জন্য সারা বিশ্ব জুড়ে যতগুলো দেশ রয়েছে তার মধ্যে তিন নম্বরে অবস্থান করছে কানাডা । তাছাড়া পড়াশুনা, চাকরি চিকিৎসা এবং ভ্রমণ করার জন্য কানাডা ভালো একটি অবস্থানে রয়েছে ।
কানাডা আমেরিকা মহাদেশের উত্তরে অবস্থিত একটি দেশ যার সর্বমোট দশটি প্রদেশ রয়েছে । যা আটলান্টিক মহাসাগর থেকে প্রশান্ত মহাসাগর এবং উত্তরে আর্কটিক মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত । আয়তনের দিক দিয়ে সারা বিশ্বে কানাডার অবস্থান দ্বিতীয় । এই দেশ টি যেহেতু মহাসাগরের নিকটবর্তী তাই এখানে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান রয়েছে ।
আরও পড়ুন ➝ বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যেতে কত টাকা লাগে
আপনি যদি একজন ভ্রমন পিপাসা মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই সুন্দর ও দর্শনীয় স্থান দেখতে খুব পছন্দ করবেন । বর্তমানে কানাডাতে ঘুরে দেখার জন্য নায়াগ্রা ফলস, সিএন টাওয়ার, রিপলি অ্যাকুয়ারিয়াম কানাডা, রয়্যাল অন্টারিও মিউজিয়াম, এবং কাসা লোমা সহ বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে । যেগুলো আপনি ভ্রমণ করে দেখতে পারেন ।
তাই আজকের পোস্টে আমাদের মূল আলোচনার বিষয়বস্তু হচ্ছে কানাডা ভিজিট ভিসা কি, কিভাবে ভিজিট ভিসা পাওয়া যায়, আবেদনের নিয়ম, ভিসা বাবদ ফি কত টাকা, ভিসা পেতে কতদিন সময় লাগবে এবং যদি আমরা ভিজিট ভিসা নিয়ে কানাডায় যাই তাহলে কি কাজ করতে পারবো কিনা । আপনি যদি এই সকল বিষয়ে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো পোস্ট পড়তে থাকুন ।
কানাডা কয় ধরনের ভিসা দেয়
আপনি যদি কানাডায় যেতে চান তাহলে সবার প্রথমে ভিসার দরকার পড়বে । কেননা ভিসা ব্যতীত আপনি কখনো কানাডায় যেতে পারবেন না । যদি ভুলক্রমে অবৈধভাবে কানাডায় চলে যান ভিসা ব্যতীত অথবা জাল ভিসা নিয়ে তাহলে অবশ্যই লাভের থেকে ক্ষতির সম্মুখীন বেশি হবেন । আপনি যে উদ্দেশ্যে কানাডায় যাবেন সেটি কখনো সফল হবে না ।
এতে আপনার কানাডা থাকা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হবে এবং জীবনের ঝুঁকি বেড়ে যাবে । কোন না কোন সময় আপনাকে কানাডার পুলিশ গ্রেফতার করবে এবং জেলেও প্রেরণ করে দিতে পারে । তাই অবশ্যই কানাডায় যেতে হলে আমাদের বৈধ ভিসা নিয়ে যেতে হবে । কোনরকম ডুপ্লিকেট বা জাল ভিসা বা অবৈধ পথে কানাডায় যাওয়া যাবে না ।
এখন অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন ভাই কানাডায় যাওয়ার জন্য কয় ধরনের ভিসা বর্তমানে চালু রয়েছে । যদিও বা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না কতগুলো ভিসা কানাডা সরকার কর্তৃক চালু রয়েছে । কেননা ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরির জন্য ভিন্ন ভিন্ন ভিসা ব্যবস্থা চালু রয়েছে । তবে আমরা কানাডায় যাওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি ভিসা নাম নিচে তুলে ধরলামঃ
- কানাডা ভিজিট ভিসা
- কানাডা স্টুডেন্ট ভিসা
- কানাডা মেডিকেল ভিসা
- কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা
- কানাডা স্থায়ী বসবাসের ভিসা
উপরের যতগুলো ভিসার নাম উল্লেখ করা হয়েছে আপনি চাইলে যে কোন একটি ব্যবহার করে কানাডাতে যেতে পারেন । যদি আপনি ভ্রমণ করতে যান তাহলে কানাডা ভিজিট ভিসার জন্য আবেদন করবেন এবং আবেদন ফি প্রদান করে ভিসা সংগ্রহ করবেন । অতঃপর কানাডায় ভ্রমণ করার জন্য চলে যাবেন ।
কানাডা ভিজিট ভিসা কি
অনেকের মনে প্রশ্ন হতে পারে কানাডা ভিজিট ভিসা কি? ভিজিট একটি ইংরেজি শব্দ যার অর্থ হলো ভ্রমণ করা । তাহলে কানাডা ভিজিট ভিসা বাংলায় অর্থ হচ্ছে কানাডা ভ্রমণের ভিসা । এই ভিসাটি মূলত যারা কানাডায় বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে ঘুরে দেখতে আগ্রহী তাদের জন্য চালু করা হয়েছে ।
কানাডাতে বর্তমানে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান এবং হোটেল রয়েছে যেগুলোতে বিদেশি দর্শকরা প্রতিনিয়তন ভ্রমণ করার জন্য যাতায়াত করেন । এতে কানাডিয়ান সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণের অর্থ উপার্জন করেন । এর ফলে কানাডিয়ান মানুষের মাথা পিছু জিডিপি বিপুল হারে বৃদ্ধি পায় ।
কানাডা ভিজিট ভিসা কিভাবে পাবেন
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কানাডা ভ্রমণ করার জন্য ভ্রমণ ভিসা বা ভিজিট ভিসা আমরা কিভাবে পাব? এই ভিসা হাতে পাওয়ার জন্য আপনি দুইটি উপায়ে অবলম্বন করতে পারেন । প্রথমটি হচ্ছে, আপনি ব্যক্তিগতভাবে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন । অপরটি হচ্ছে কোন দালাল অথবা এজেন্সি ব্যবহার করে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন ।
আরও পড়ুন ➝ নেদারল্যান্ডস যেতে কত টাকা লাগে
তাছাড়া আপনি যদি প্রথমবারের জন্য কানাডায় যেয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই বায়োমেট্রিক সম্পন্ন করতে হবে (বায়োমেট্রিক বলতে ছবি ও হাতের ফিঙ্গারপ্রিন্ট বোঝানো হয়েছে) । তাই কানাডিয়ান ভ্রমন ভিসার আবেদন করার পর কানাডা বায়োমেট্রিক পার্টনার ভিএফএস গ্লোবালের ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং সিলেটের যেকোনো একটি অফিসে গিয়ে আপনার ছবি এবং ফিঙ্গারপ্রিন্টের ছাপ দিতে হবে ।
কানাডা ভিজিট ভিসা আবেদনের নিয়ম
আপনি যদি কানাডিয়ান ভিসা পেতে চান সেটা হোক ভিজিট ভিসা অথবা যেকোন ভিসা সবার প্রথমে আপনার সিদ্ধান্ত নিতে হবে এই ভিসার আবেদন কি আপনি নিজে করবেন নাকি কোন দালাল বা এজেন্সির মাধ্যমে করাবেন । ভিসার আবেদন যদি দালাল বা এজেন্সির মাধ্যমে করিয়ে নেন তাহলে ভিসা আবেদন, ভিসা প্রসেসিং, ডকুমেন্ট সাবমিট এবং ভিসা ফি সহ সকল যাবতীয় কার্যাদি দালাল বা এজেন্সি করে দিবে ।
আর যদি আপনি নিজে থেকে কানাডার ভ্রমণ ভিসার জন্য আবেদন করতে চান তাহলে সবার প্রথমে দেশটির ভিসা আবেদন সম্পর্কিত ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে । সেই ওয়েবসাইটটি হলোঃ https://www.canada.ca/en/services/immigration-citizenship.html
তারপর সেখান থেকে Visit Visa লেখাটির উপর ক্লিক করতে হবে যা আপনাকে নতুন একটি পেইজে নিয়ে যাবে । এখন আপনি নিচের দিকে স্ক্রল করে এসে দেখবেন লেখা আছে apply for a visitor visa এই লেখাটির উপর ক্লিক করবেন । যা আপনাকে আবারো ভিসা আবেদন করার নতুন পেইজে নিয়ে যাওয়া হবে ।
এখন এই পেইজে আপনার ভিসা সম্পর্কিত যা যা প্রশ্ন করা হবে সবকিছুর ঠিকঠাক উত্তর দিতে হবে । যেমনঃ আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম, স্থায়ী ঠিকানা ও জাতীয় পরিচয় পত্র নাম্বার । অর্থাৎ আপনাকে যা যা তথ্য দিতে বলবে সবকিছু তথ্য দিয়ে সাবমিট করে দিবেন । তাহলে আপনার কানাডার ভিজিট ভিসার জন্য আবেদন সম্পন্ন হয়ে যাবে ।
কানাডা ভিজিট ভিসার ফি কত
কানাডার ভ্রমণ ভিসা আবেদন করার পর আপনাকে আবেদন ফি প্রদান করতে হবে । আবেদন ফি কত টাকা তা আপনি ওই ওয়েবসাইটেই দেখতে পাবেন । সেখানে সুন্দর করে লেখা আছে আবেদন ফি বাবদ ১০০ কানাডিয়ান ডলার দিতে হবে । যা বাংলা টাকায় কনভার্ট করলে হয় ৮ হাজার টাকার উপরে । সুতরাং সফলভাবে আবেদন করার পর আপনি ভিসা ফি বাবদ ৮ হাজারের কিছু বেশি টাকা পেমেন্ট করে দিবেন ।
আর যদি আপনি কোন দালাল বা এজেন্সির মাধ্যম ব্যবহার করে ভ্রমণ ভিসার জন্য আবেদন ফি জমা দেন তাহলে তারা আপনার থেকে মিনিয়াম ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকার মত হাতিয়ে নিবে । কোন কোন সময় দেখা যাবে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত চেয়ে বসতে পারে । সুতরাং আমি মনে করি নিজে থেকে আবেদন করে নিজেই ভিসা ফি জমা দিন ।
কানাডা ভিজিট ভিসা পেতে কি কি ডকুমেন্ট লাগবে
আপনি যেদিন কানাডিয়ান ভ্রমণ ভিসা বা ভিজিট ভিসা আবেদন করতে যাবেন তখন আপনাকে বেশ কিছু ডকুমেন্ট সাবমিট করা লাগতে পারে । এখন আমি আপনাদের সুবিধার্থে ভিসা পাওয়ার জন্য যে যে ডকুমেন্টস বা তথ্যগুলো লাগবে তা নিচে তুলে ধরলামঃ
- পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি রঙিন ছবি
- বৈধ পাসপোর্ট (মিনিমাম 6 মাস মেয়াদ)
- পাসপোর্ট এর ১ এবং ২ নং পৃষ্ঠার ফটোকপি
- জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি
- জন্ম সনদের ফটোকপি (বাচ্চাদের ক্ষেত্রে)
- ইংরেজিতে ছাপানো ভিজিটিং কার্ডের দুই কপি ফটোকপি
- বিগত ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট এর ফটোকপি
- ট্রেড লাইসেন্স এর ফটোকপি (কোম্পানির ক্ষেত্রে)
উপরোক্ত যতগুলো ডকুমেন্টস বা তথ্য তুলে ধরা হলো আপনি যদি কানাডাতে ভ্রমণ ভিসা পেতে চান তাহলে অবশ্যই অবশ্যই এগুলো আপনাকে সাবমিট করতে হবে । তা না হলে আপনি কিন্তু ভ্রমণ ভিসার জন্য একজন উপযোগী ব্যক্তির নন বলে গণ্য হবেন । অতএব ভিসা আবেদন করার পূর্বে ঐ সকল ডকুমেন্ট গুলো সংগ্রহ করে নিবেন ।
কানাডা ভিজিট ভিসা পেতে কত দিন সময় লাগে
কানাডার ভ্রমণ ভিসা বা ভিজিট ভিসা আবেদন করার পর আমাদের সবার মনে একটি প্রশ্ন জাগে সেটি হচ্ছে এই ভিসাটি আমরা কত দিন পর পাব? হ্যাঁ, প্রশ্নটি করাই স্বাভাবিক । মূল কারণ হচ্ছে, আমরা কেউ বেশি সময় অপেক্ষা করতে চাই না । সাধারণত ভ্রমণ ভিসার ক্ষেত্রে আবেদন করার সর্বোচ্চ ১ থেকে ২ মাস পর আপনি কানাডার ভিজিট ভিসা হাতে পেয়ে যাবেন ।
কানাডা ভিজিট ভিসায় গিয়ে কি কাজ করা যায়
বর্তমানে অনেক মানুষ আছে যারা বিভিন্ন রকম দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করার জন্য প্রাথমিক অবস্থায় কানাডাতে যান । কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর সেখানকার জীবন যাত্রার মান ও কাজ কর্মের ভালো দিক দেখে সেখানে থেকে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে বসেন । তাই অনেকে প্রশ্ন করেন যদি আমরা কানাডা ভিজিট ভিসাই যায় তাহলে কি সেখানে গিয়ে কি কাজ করার কোন সুযোগ আছে?
উত্তরটি হবে হ্যাঁ, আপনি যদি ভ্রমণ করার জন্য কানাডায় যান তাহলে নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পূর্বে আপনি ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন করার সুযোগ পাবেন । এই সুযোগটি কিন্তু আপনি সচরাচর অন্যান্য দেশে পাবেন না । এখন আপনাদের সুবিধার্থে আমি নিচে তুলে ধরছি অভিবাসী ভিসার জন্য কি কি লাগবে ।
- আপনি যেদিন কানাডিয়ান অভিবাসী ভিসার আবেদন করবেন ঐদিন আপনার বৈধ ভিজিটর স্ট্যাটাস থাকতে হবে ।
- কাজের জন্য অবশ্যই একটি বৈধ প্রস্তাব থাকতে হবে । যেখানে সুন্দরভাবে লিখা থাকবে আপনাকে শ্রমবাজার মূল্যায়ন প্রস্তাবের অনুমোদন থাকতে হবে ।
আপাতত উপরোক্ত তথ্যগুলো যদি আপনি ফলো করেন এবং নিয়মমাফিক অঙ্গীকার নামাই একমত হন তাহলেই কিন্তু আপনি কানাডায় ভ্রমণ ভিসায় গিয়ে সরাসরি কাজ করার জন্য ওয়ার্ক ভিসা বা কাজের ভিসায় নিজেকে যোগদান করাতে পারবেন ।
আমাদের শেষ কথা
সম্মানিত পাঠক বৃন্দ, আজকের পোস্টে আমরা উত্তর আমেরিকার উন্নত দেশ কানাডায় ভ্রমণ করার জন্য কিভাবে ভিসা পেতে পারি, ভিসা পেতে কতদিন সময় লাগবে, কত টাকা খরচ হবে, কি কি ডকুমেন্টস লাগবে এবং সেই সাথে কিভাবে ভিজিট ভিসা থেকে ওয়ার্ক ভিসায় রূপান্তরিত করা যায় সবকিছু বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি ।
আপনি যদি আমার দেখানো প্রতিটি স্টেপ ফলো করেন তাহলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস আপনিও খুব সহজে কানাডার ভ্রমণ ভিসা পেয়ে যাবেন । আর আপনি যদি এই কাজটি সফলভাবে করতে পারেন তাহলে আমার এই পোস্টটি লিখতে যতটুকু কষ্ট হয়েছে তা সার্থক হবে বলে আমি মনে করি । যদি পোস্টটি ভালো লাগে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন । আজকের মত এখানেই শেষ করছি । সবাই ভালো থাকুন । সুস্থ থাকুন । আল্লাহ হাফেজ ।