আপনি কি কিস্তিতে মোবাইল কেনার নিয়ম জানতে চাচ্ছেন? আপনার উত্তরটি যদি হ্যাঁ হয়ে থাকে তাহলে সঠিক জায়গাতে এসেছেন । কেননা আজকের পোস্টে আমরা আলোচনা করব কিভাবে কিস্তিতে মোবাইল কেনা যায় । তাছাড়া যদি কিস্তিতে মোবাইল নিই তাহলে কি কি সুবিধা পাব, কি কি ডকুমেন্ট আমাদের সাবমিট করতে হবে এবং কেনার নিয়ম সম্পর্কে ।
মোবাইল ফোন আমাদের সকলের জন্য অতীব প্রয়োজনীয় একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস । একটা সময় ছিল শুধুমাত্র কথা বলার কাজে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা হতো । কিন্তু কালের পরিক্রমায় বিজ্ঞানের প্রযুক্তি আপডেট হতে হতে সেই মোবাইল ফোন এখন স্মার্টফোনে পরিণত হয়েছে । যার মাধ্যমে আপনি দৈনন্দিন জীবনের সকল কার্যক্রম সম্পাদন করতে পারবেন ।
আরও পড়ুন ➝ কিস্তিতে ওয়ালটন মোবাইল কেনার নিয়ম
যেমনঃ ঘরে বসে খাবার অর্ডার করা, বাজার করা, বাসের টিকিট কাটা, ট্রেনের টিকিট কাটা এবং বিমানের ফ্লাইট বুকিং করা সহ সকল কার্যক্রম আপনি এই স্মার্টফোন ব্যবহার করে করতে পারবেন । আর আপনার হাতে যদি ইতিমধ্যেই স্মার্টফোন না থাকে তাহলে কিন্তু আপনি প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারবেন না । দেখা যাবে আপনি অনেক পিছিয়ে যাবেন ।
আমাদের অনেকের শখ থাকে ভালো মানের স্মার্টফোন কেনার কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ হাতে না থাকার কারণে সেই স্বপ্ন আর পূরণ হয়ে ওঠে না । কিন্তু আপনি হয়তো জেনে অবাক হবেন বাংলাদেশের বেশ কিছু কোম্পানি আপনাকে কিস্তিতে মোবাইল কেনার সুযোগ করে দিয়েছে । আপনি চাইলে ওই সকল কোম্পানি থেকে কিছু ডাউন পেমেন্ট প্রদান করে কিস্তিতে মোবাইল নিতে পারবেন ।
আপনি যদি ইতিমধ্যে কিস্তিতে মোবাইল নিতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে এই পোস্টটি শুধুমাত্র আপনার জন্য তৈরি করা হয়েছে । তাই পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন । তাহলে আপনি কিস্তিতে মোবাইল সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য জানতে পারবেন । তো আর দেরি না করে চলুন আমাদের মূল আলোচনায় যাওয়া যাক ।
কিস্তিতে মোবাইল কেনার সুবিধা
আমরা যদি কিস্তিতে মোবাইল ফোন কিনি তাহলে বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করতে পারবো । এখন আপনাদের সুবিধার্থে কিস্তিতে মোবাইল নেওয়ার পর যে যে সুবিধা পাওয়া যায় তা উল্লেখ করা হলো ।
- যেকোনো ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোন কেনা যাবে ।
- সর্বোচ্চ ৩৬ মাস পর্যন্ত কিস্তি দেওয়া যাবে ।
- ৩ মাসের ভিতরে সব টাকা দিলে নগদ মূল্যে মোবাইল কেনার সুযোগ ।
- উন্নতমানের প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি মোবাইল পাওয়া যাবে ।
- শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের জন্য সর্বোচ্চ ১২ মাসের কিস্তি দেওয়ার সুযোগ সুবিধা রয়েছে ।
- এতিমখানা প্রতিষ্ঠানের জন্য ০% পার্সেন্ট ডাউন পেমেন্ট কিস্তি নেওয়ার সুযোগ রয়েছে ।
এখানে যতগুলো সুবিধার কথা উল্লেখ করা হয়েছে এগুলো ছাড়াও আরো অনেক সুবিধা পাবেন । তাই আপনি চাইলে কিস্তিতে মোবাইল ফোন কিনে ব্যবহার করতে পারেন ।
কিস্তিতে মোবাইল কিনতে কি কি লাগে
আপনি যদি কিস্তিতে মোবাইল ফোন নিতে চান তাহলে জানা উচিত কি কি ডকুমেন্ট সাবমিট করতে হবে । সেই সাথে আরো জানা দরকার কোন জামিনদার লাগবে কিনা এবং কত পার্সেন্ট ডাউন পেমেন্ট দিতে হবে । এখন নিচে কিস্তিতে মোবাইল নিতে যা যা দরকার তা তুলে ধরা হলো ।
- বয়স ১৮ বছর থেকে ৬৫ বছর হতে হবে
- জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি
- পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি
- দুইজন জামিনদারের জাতীয় পরিচয় পত্র ফটোকপি এবং পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি
- একজন নমিনির জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি এবং পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি
- ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার এবং ক্রেডিট কার্ড তথ্য
এখানে যতগুলো ডকুমেন্টস তুলে ধরা হয়েছে আপনি যদি কখনো কিস্তিতে মোবাইল ফোন নিতে চান তাহলে সবার প্রথমে তা সংগ্রহ করে নিন ।
কিস্তিতে মোবাইল কোথায় পাবো?
এখন অনেকের প্রশ্ন হতে পারে কিস্তিতে মোবাইল কোথায় পাওয়া যায়? আপনি যদি নিজের ইচ্ছামত ও পছন্দের স্মার্টফোন কিস্তিতে নিতে চান তাহলে বাংলাদেশের সেরা তিনটি কোম্পানি রয়েছে । এই সকল কোম্পানি থেকে আপনি যেকোন স্মার্ট ফোন কিস্তিতে নিতে পারবেন । নিচে কোম্পানি তিনটির নাম তুলে ধরা হলো ।
- দারাজ
- রবি শপ
- ওয়ালটন
সারা বাংলাদেশের যেকোন প্রান্ত থেকে এই তিনটি কোম্পানি থেকে আপনি মোবাইল ফোন কিস্তিতে নিতে পারবেন ।
কিস্তিতে মোবাইল কেনার নিয়ম
আপনি যদি কিস্তিতে মোবাইল ফোন নিতে চান তাহলে সবার প্রথমে বাছাই করতে হবে কোন কোম্পানি থেকে মোবাইল কিস্তিতে নিতে চাচ্ছেন । এখন আপনাদের সুবিধার্থে উপরোক্ত তিনটি কোম্পানির কিস্তিতে মোবাইল ফোন কেনার নিয়ম তুলে ধরা হলো ।
দারাজ থেকে কিস্তিতে মোবাইল কেনার নিয়ম
সবার প্রথমে আপনাকে দারাজ অফিসিয়াল ওয়েবসাইট অথবা মোবাইল অ্যাপে একাউন্ট তৈরি করতে হবে । তারপর আপনাকে পেমেন্ট মেথড হিসেবে ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট নাম্বার এবং ক্রেডিট কার্ড নাম্বার দিতে হবে । তারপর সেখান থেকে যে ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোনটি পছন্দ হয় সেটি কিনতে পারবেন ।
এখানে একটি বিষয় মনে রাখবেন সব ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট এবং ক্রেডিট কার্ড কিন্তু দারাজে ব্যবহার করতে পারবেন না । নিচে উল্লেখ করা হলো কোন কোন ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট দিয়ে আপনি দারাজ থেকে কিস্তিতে মোবাইল নিতে পারবেন
- স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক
- সাউথইস্ট ব্যাংক
- এনআরবি ব্যাংক
- সিটি ব্যাংক
- মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক
- যমুনা ব্যাংক
- ইস্টার্ন ব্যাংক
- ব্রাক ব্যাংক
আপনি যদি এই সকল ব্যাংকের একজন সম্মানিত গ্রাহক হয়ে থাকেন তাহলে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাম্বার এবং ক্রেডিট কার্ড নাম্বার ব্যবহার করার মাধ্যমে দারাজ থেকে কিস্তিতে মোবাইল ফোন নিতে পারবেন ।
রবি শপ থেকে কিস্তিতে মোবাইল কেনার নিয়ম
আমরা জানি রবি বাংলাদেশের অন্যতম মোবাইল সিম অপারেটর কোম্পানি । তারা তাদের গ্রাহকদের ভালো নেটওয়ার্ক দেওয়ার পাশাপাশি সর্বোচ্চ স্মার্ট ফোন কেনার সুযোগ করে দিয়েছে । তাই তারা রবি শপ নামে একটি অনলাইন ওয়েবসাইট তৈরি করেছে । এখান থেকে আপনি চাইলে কিস্তিতে মোবাইল সংগ্রহ করতে পারবেন ।
বর্তমানে রবি শপে বেশকিছু ব্যাংক রয়েছে ওইগুলো ব্যবহার করে কিস্তিতে মোবাইল ফোন কেনা যায় । আপনি যদি ওই সকল ব্যাংকের সম্মানিত গ্রাহক হন তাহলে রবি থেকে কিস্তিতে মোবাইল ফোন সংগ্রহ করতে পারবেন । এখন কোন কোন ব্যাংক রবি শপে সাপোর্ট করে তা উল্লেখ করা হলো ।
- ইস্টার্ন ব্যাংক
- ব্রাক ব্যাংক
- ট্রাস্ট ব্যাংক
- ডাচ বাংলা ব্যাংক
- ব্যাংক এশিয়া
- মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক
ওয়ালটন থেকে কিস্তিতে মোবাইল কেনার নিয়ম
বর্তমানে সহজভাবে কিস্তিতে মোবাইল ফোন কেনার মাধ্যম হচ্ছে ওয়ালটন থেকে কিস্তিতে মোবাইল কেনা । ওয়ালটন তার গ্রাহকদের জন্য বেশ কিছু ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস কিস্তিতে নেওয়ার সুযোগ করেছে । যেমন ওয়ালটন এসি, ওয়ালটন ফ্রিজ, ওয়ালটন মোবাইল, এবং ওয়ালটন ল্যাপটপ ইত্যাদি ।
ওয়ালটন থেকে কিস্তিতে মোবাইল নেওয়ার জন্য আপনাকে নিকটস্থ ওয়ালটন শোরুম বা ওয়ালটন প্লাজায় যোগাযোগ করতে হবে । সেখানে গিয়ে আপনি যে ব্র্যান্ডের স্মার্টফোনটি পছন্দ করেন সেটি সিলেক্ট করে ওখানকার কর্মকর্তার সাথে আপনার পছন্দের কথা বলবেন । তারপর উনি কিস্তি সংক্রান্ত একটি ফর্ম দিবেন সেটি আপনাকে দেখে পূরণ করতে হবে ।
আপনার দুইজন জামিনদার লাগবে এবং তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ফটোকপি এবং পাসপোর্ট সাইজের ছবি দিতে হবে এবং একজন নমিনির জাতীয় পরিচয় পত্র ফটোকপি ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি জমা দিবেন । তারপর সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ১০% ডাউন পেমেন্টের টাকা দিবেন । তাহলে ওখানকার কর্মকর্তা আপনাকে মোবাইল দিয়ে দিবে ।
কিস্তিতে মোবাইল কেনার অসুবিধা
আমরা ইতিমধ্যে বাংলাদেশের জনপ্রিয় সেরা তিনটি কোম্পানি থেকে কিভাবে কিস্তিতে মোবাইল সংগ্রহ করা যায় সে সম্পর্কে জেনেছি । তাছাড়া কিস্তিতে মোবাইল নিয়ে কি সুবিধা পাব এবং কি কি ডকুমেন্ট লাগবে সবকিছু জেনেছি । এখন প্রশ্ন হল যদি কিস্তিতে মোবাইল ফোন কিনি তাহলে কি কি অসুবিধা থাকতে পারে ।
- সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ না করা পর্যন্ত আপনি মোবাইলের কাগজপত্র পাবেন না ।
- মোবাইল নষ্ট হয়ে গেলে রিপেয়ার এবং সার্ভিসিং করার খরচ আপনার নিজেকে বহন করতে হবে ।
- নগদ টাকা দিয়ে মোবাইল কিনলে যত টাকা লাগে তার থেকে বেশি টাকা পরিশোধ করতে হবে ।
আমাদের শেষ কথা
আজকের পোস্টে আমরা কিভাবে কিস্তিতে মোবাইল কেনা যায় সে সম্পর্কে আলোচনা করেছি । বাংলাদেশের অন্যতম সেরা তিনটি কোম্পানির দারাজ, ওয়ালটন এবং রবি শপ থেকে কিস্তিতে মোবাইল নিলে কি কি ডকুমেন্ট সাবমিট করতে হবে সে সম্পর্কেও আলোচনা করেছি । তাই আপনি যদি কখনো মনে করেন কিস্তিতে মোবাইল দিবেন তাহলে উপরোক্ত তথ্য ফলো করে মোবাইল ফোন নিতে পারেন ।
আশা করি আমার এই পোস্টটি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে । পোস্টটি পড়ার পর আপনি যদি উপকৃত হন তাহলে আমি মনে করব এই পোস্ট লিখতে যতটুকু কষ্ট হয়েছে তা সার্থক হয়েছে । তাছাড়া আমার এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার যদি কোন মতামত থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন । অতএব আজকের মত এখানেই শেষ করছি । সবাই ভালো থাকুন । সুস্থ থাকুন । আল্লাহ হাফেজ ।
একটা মোবাইল কিস্তিতে নিতে চাই কি করতে হবে