আমাদের অনেক ভাই ও বোন গ্রিস যেতে কত টাকা লাগে সে সম্পর্কে জানতে চান । আপনিও কি এই বিষয়ে জানতে আগ্রহী? আপনার উত্তরটি যদি হ্যাঁ হয়ে থাকে তাহলে সঠিক জায়গাতে এসেছেন । কারণ আজকের পোস্টে আমরা আলোচনা করব বর্তমান সময়ের অন্যতম ইউরোপের উন্নত দেশ গ্রিসে যেতে কত টাকা লাগে, বেতন কত এবং কোন কাজে চাহিদা বেশি ।
বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক মানুষ বিদেশে প্রবাসী হিসেবে কাজ করছেন । বাংলাদেশের বেশিরভাগ তরুণ ও তরুণীদের টার্গেট হচ্ছে ইউরোপের দেশগুলো । ইউরোপের বেশিরভাগ দেশ খুবই উন্নত । সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা অতি উচ্চ পর্যায়ের এবং টাকার মানও অনেক বেশি ।
আরও পড়ুন ➝ দুবাই ট্যাক্সি ড্রাইভার বেতন কত
আমাদের বাংলাদেশে শিক্ষিত মানুষের তুলনায় বেকার সংখ্যা বেশি । পর্যাপ্ত পরিমাণে সরকারি ও বেসরকারি চাকরি না থাকার কারণে বেশিরভাগ তরুণ-তরুণী ইউরোপের দেশগুলোতে যাওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে । ফলে সেখানে উচ্চ বেতনে চাকরি করার আশঙ্কা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
নিজের বেকারত্ব গোছাতে এবং পরিবারের ভার সামলানোর জন্য অনেক মানুষ এখন গ্রিসে যেতে আগ্রহী । এই দেশে গেলে আপনি খুব অল্প সময়ে ভালো পরিমাণে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন । তবে আমাদের যাদের আগ্রহ আছে গ্রীস যাওয়ার জন্য কিভাবে এখানে যাওয়া যায় সে সম্পর্কে জানা খুবই জরুরী ।
আপনি যদি ইতিমধ্যে গ্রিস যেতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য তৈরি করা হয়েছে । তাই পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন । তো আর দেরি না করে চলুন মূল আলোচনায় যাওয়া যাক ।
গ্রিস যেতে কত টাকা লাগে
আমরা যারা ইউরোপের অন্যতম শীর্ষ দেশ গ্রিসে যেতে আগ্রহী তাদের প্রথম প্রশ্ন গ্রিসে যেতে কত টাকা লাগে? আপনি যদি কখনো এই দেশে যেতে আগ্রহী হন তাহলে অবশ্যই কত টাকা দিয়ে যেতে পারবেন সে সম্পর্কে জানতে হবে । কারণ আপনি যদি কোন দালাল অথবা এজেন্সির মাধ্যমে এখানে যেতে চান তাহলে খরচ সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত ।
তা নাহলে দালাল চক্র আপনাকে ঠকিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা থাকবে । তাই আমরা অবশ্যই সঠিক তথ্য অনুযায়ী গ্রিসের খরচ সম্পর্কে জানব । তাহলেই আশা করি দালাল চক্র আমাদের ঠকাতে পারবেন না । তাই আমরা যারা গ্রিসে যেতে আগ্রহী অবশ্যই এখানে যাওয়ার খরচ সম্পর্কে জানব ।
সাধারণত গ্রিসে যাওয়ার খরচ বিভিন্ন ভিসার ক্যাটাগরি এবং ভিসার মেয়াদের উপর ভিত্তি করে হয়ে থাকে । আপনি চাইলে সরকারিভাবে গ্রিস যেতে পারেন । এক্ষেত্রে আপনার খরচ নরমাল ভাবে যাওয়ার খরচ থেকে তুলনামূলক অনেক কম হবে । কিন্তু সরকারিভাবে গ্রিস যেতে হলে আপনাকে সরকারি সার্কুলারে পেতে হবে ।
আরও পড়ুন ➝ দুবাই থেকে আমেরিকা যাওয়ার সহজ উপায়
বর্তমানে গ্রিসের বিভিন্ন ক্যাটাগরির উপর ভিত্তি করে ভিসা পাওয়া যায় । তবে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মানে ব্যবহৃত হচ্ছে গ্রিস ওয়ার্ক পারমিট ভিসা অর্থাৎ গ্রিস কাজের ভিসা । আমরা যেহেতু গ্রিস যাব কাজ করতে তাই আমাদের এই ভিসার খুবই দরকার । বর্তমানে গ্রিস ওয়ার্ক পারমিট ভিসার মূল্য হচ্ছে ৮ লাখ থেকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত ।
তবে আপনি যদি সরকারি ভাবে গ্রিস যান তাহলে কিন্তু ৪-৫ লাখ টাকা খরচ করেই যেতে পারবেন । আপনার ভাগ্য ভালো যদি থাকে তাহলে আপনি অল্প টাকা খরচ করে সরকারিভাবে গ্রিস দিতে পারবেন । কিন্তু সেই সুবিধা যদি আপনি না পান তাহলে কোন এজেন্সি বা দালালের মাধ্যমে ৮ লাখ থেকে ১২ লাখ টাকা খরচ করে গ্রিসে চলে আসুন ।
গ্রিসের বেতন কত
গ্রিসে বিভিন্ন ক্যাটাগরির উপর ভিত্তি করেন বেতন নির্ধারণ করা যায় । আপনি কোন ক্যাটাগরির ভিসা নিয়ে গ্রিসে যাচ্ছেন তা সবার প্রথমে জানতে হবে । আপনি যদি গ্রিস ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে যান তাহলে তার বেতন এক রকম হবে । আবার যদি গ্রিস ড্রাইভিং ভিসা নিয়ে যান তাহলে তার বেতন আবার আরেক রকম হবে । তাই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা কোন ভিসা নিয়ে গ্রিস যাব ।
- কৃষি ভিসার বেতন ২-৩ লাখ টাকা
- কনস্ট্রাকশন ভিসার বেতন ১.৫-২ লাখ টাকা
- রেস্টুরেন্ট ভিসার বেতন ২-৩ লাখ টাকা
- গার্মেন্টস ভিসার বেতন ১.৫-২ লাখ টাকা
- ড্রাইভিং ভিসার বেতন ৩-৪ লাখ টাকা
- রংমিস্ত্রি ভিসার বেতন ২-৩ লাখ টাকা
গ্রিসের আবেদন করার নিয়ম
আপনি যদি গ্রিসে যেতে চান তাহলে সবার প্রথমে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে । ভিসা ছাড়া কখনো আপনি গ্রিসে যেতে পারবেন না । যদি ভুলক্রমে ভিসা ছাড়া গ্রিসে চলে আসেন তাহলে আপনাকে কঠিন শাস্তি পেতে হবে । সেখানকার পুলিশ আপনাকে জেলে ও প্রেরণ করে দিতে পারে । তাই আমরা সবার প্রথমে ভিসা তৈরি করে নিব ।
গ্রিস ভিসার আবেদন আপনি বেশ কয়েকটি মাধ্যমে সম্পন্ন করতে পারবেন । আপনার পরিবার-পরিজন অথবা আত্মীয়-স্বজনের কেউ যদি গ্রিসে থাকে হলে তার মাধ্যমে আপনি গ্রিসের ভিসার সকল আবেদন সম্পন্ন করতে পারবেন । অথবা কোন এজেন্সি অথবা দালালের মাধ্যমে সেই দেশে যাওয়ার ভিসার আবেদন করতে পারবেন ।
তবে আপনি চাইলে নিজে গ্রিসে যাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন । এখন কিভাবে এই আবেদন করতে হয় তা সম্পর্কে আমরা জানবো । গ্রিসে যাওয়ার আবেদন করার জন্য নিচের স্টেপ গুলো ফলো করুন ।
প্রথমে আপনাকে এই সাইটে https://www.mfa.gr/usa/en/visas.html?mission=nyo প্রবেশ করতে হবে ।
এখন সেনজেন ভিসা নাকি ন্যাশনাল ভিসা যেকোনো একটি ভিসা সিলেক্ট করুন ।
তারপর আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, শিক্ষাগত তথ্য অর্থাৎ যা যা তথ্য চাইবে সবকিছু পূরণ করে সাবমিট করুন ।
ভিসা আবেদন করার পর আবেদন কপি প্রিন্ট কপি ডাউনলোড করে গ্রীস এম্বাসি বাংলাদেশে জমা দিন ।
এখানে যেভাবে আবেদন করার নিয়ম তুলে ধরা হয়েছে আপনি ঠিক একইভাবে আবেদন করবেন । আপনি যদি সেনজেন ভিসা পেতে চান তাহলে সেনজেন সিলেক্ট করবেন । যদি জাতীয় হিসেবে চান তাহলে ন্যাশনাল সিলেক্ট করবেন । আশা করি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন ।
গ্রিসে যেতে কি কি লাগে
আপনি যদি গ্রিসে যেতে চান তাহলে বেশ কিছু কাগজপত্র দরকার পড়বে । আমরা এখন ওই সকল কাগজপত্র সম্পর্কে জানব । আপনাদের সুবিধার্থে নিচে গ্রিসে যাওয়ার কাগজপত্র সম্পর্কে নিম্নে তুলে ধরা হলো ।
- বৈধ পাসপোর্ট
- বৈধ ভিসা
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- জাতীয় পরিচয় পত্র
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ
- মেডিকেল রিপোর্ট ফটোকপি
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ভেরিফিকেশন
- কাজের অভিজ্ঞতার সনদ
আপনি যদি কখনো গ্রিসে যেতে আগ্রহী হোন তাহলে উপরের কাগজপত্র সবার প্রথমে সংগ্রহ করবেন । অতঃপর গ্রিসে যাওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করবেন ।
গ্রিস কোন কাজে চাহিদা বেশি
বর্তমানে গ্রিসে কোন কাজে সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে এ সম্পর্কে আমাদের জানা খুবই দরকার । আমরা যদি ওই বিষয়ে অভিজ্ঞ থাকি তাহলে শুরু থেকে ভালো বেতন পাব । এখন আপনাদের সুবিধার্থে কোন কোন কাজে গ্রিসে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে চাহিদা রয়েছে তা উল্লেখ করা হলো ।
- কৃষি শ্রমিক
- কনস্ট্রাকশন শ্রমিক
- রেস্টুরেন্ট কর্মচারী
- রং মিস্ত্রি
- গার্মেন্টস শ্রমিক
- ড্রাইভার
এখানে উল্লেখ করা কাজগুলোতে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে লোক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে । আপনি যদি এই সকল বিষয়ে আগ্রহী হন এবং অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে শুরু থেকেই ভালো বেতন উপার্জন করতে পারবেন ।
আমাদের শেষ কথা
বর্তমান সময়ে ইউরোপের অন্যতম শীর্ষ উন্নত দেশ গ্রিসে যেতে কত টাকা লাগে, কিভাবে আবেদন করতে হয় ও বেতন কত টাকা সে সম্পর্কে আজকের পোস্টে বিস্তারিত জানতে পেরেছি । আপনি যদি কখনো গ্রিসে যেতে আগ্রহী তাহলে প্রথমে যে কোন একটি ভিসা সিলেক্ট করুন । তারপর ওই ভিসা নিয়ে সেখানে গিয়ে অর্থ উপার্জন করুন ।
সুপ্রিয় পাঠক, আশা করি আমার এই পোস্টটি পড়ে আপনার খুবই ভালো লেগেছে । সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার পর আপনি যদি সামান্যতম উপকৃত হন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধব ও ফ্যামিলিতে শেয়ার করবেন । তাছাড়া এই পোস্ট সম্পর্কে যদি আপনার কোন ব্যক্তিগত মন্তব্য থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন । ধন্যবাদ ।