সম্মানিত পাঠক, আপনি কি পরিযায়ী পাখির নামের তালিকা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? আপনার উত্তরটি যদি হ্যাঁ হয় তাহলে নিঃসন্দেহে সঠিক জায়গায় এসেছেন । কারণ আমরা আজকের পোস্টে জানতে পারবো বর্তমান সময়ে অত্যন্ত সুন্দর ও আমাদের হৃদয়ের অতিথি নামে পরিচিত সেরা কিছু পরিযায়ী পাখির নামের তালিকা সম্পর্কে ।
আমরা সচরাচর শীতকালে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখতে পাই । আপনার বাড়ির আশপাশে যদি কোন বিল ও নদী থাকে তাহলে দেখতে পাবেন অন্তত সৌন্দর্য প্রজাতির পাখি সেখানে কিচিরমিচির করছে । কেউ কেউ নদী বা বিল থেকে মাছ ধরছে এবং দল বেঁধে বসে রয়েছে ।
শীতের কুয়াশা ভরা সকালে গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে যখন সূর্য্যি মামা আলো দেয় তখন আমাদের মনে প্রশান্তি বয়ে আসে । কারণ আমরা চাই শীতের মধ্যে কনকনের ঠান্ডা থেকে পরিত্রাণ পেতে । আপনি যদি একজন প্রকৃতি প্রেমিক হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই শীতের সকালে পরিযায়ী পাখি দেখে নিজের মনে আনন্দ উপভোগ করবেন ।
তাছাড়া আমরা অনেকে স্টুডেন্ট রয়েছি তাদের জানার দরকার হয় কি কি নামের পরিযায়ী পাখি রয়েছে । যদিও বা সম্পূর্ণভাবে বলা সম্ভব না কত প্রজাতির পাখি মহান আল্লাহতালা সৃষ্টি করেছেণ । কিন্তু আপনি রং বেরঙের কিছু প্রজাতির পরিযায়ী পাখির নাম যদি জানেন তাহলে তাদের সম্পর্কে অসাধারণ তথ্য জানতে পারবেন ।
এখন আমরা জানবো মহান আল্লাহতালার এই পৃথিবীতে সেরা কিছু পরিযায়ী পাখির নামের তালিকা সম্পর্কে । আপনি যদি ইতিমধ্যে এই বিষয়ে জানতে আগ্রহী হন তাহলে পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকুন । তো চলুন আমাদের মূল আলোচনা শুরু করা যাক ।
পরিযায়ী পাখি কি
আপনি হয়তো পরিযায়ী পাখির নাম শুনে থাকবেন । এখন যদি বলা হয় পরিযায়ী পাখি কি? আমরা অনেকে কিন্তু এর উত্তর দিতে পারব না । পরিযায়ী পাখি হচ্ছে যারা শীতকালে নিজেদেরকে ঠান্ডায় ডানা মেলে উড়তে শুরু করে, কোনরকম উষ্ণতা খুঁজে বেড়াই না এবং পরিবেশের সাথে নিজেদেরকে অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে খাপ খাইয়ে নেয় ।
আরও পড়ুন ➝ আহসান মঞ্জিল টিকেট কত টাকা ২০২৫
আমরা বাংলাদেশে যখন শীতকাল আসে তখন বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি দেখতে পাই । এরা মূলত যখন দূর উত্তরে ঠান্ডায় তাদের ডানা মেলে উঠতে শুরু করে তখন তারা উষ্ণতা খোজেনা । বরং তারা আমাদের জন্য একটি বার্তা নিয়ে আসে । সেই বার্তাটি হলো শীতের আগাম বার্তা ।
আমরা ঐ সকল পরিযায়ী পাখিগুলো দেখার পর শিখতে পারি তাদের মতো ধৈর্য ও প্রতিকূল পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতার কথা । শীতকাল যেমন আমাদের দেশের নদী বিল তাদের জন্য অপেক্ষা করে ঠিক তেমনি আমরা আমাদের প্রিয়জনের আগমনের জন্য অপেক্ষা করে থাকি ।
পরিযায়ী পাখির নামের তালিকা
মহান আল্লাহতালার পৃথিবীতে অসংখ্য প্রজাতির পরিযায়ী পাখি রয়েছে । কিছু কিছু পরিযায়ী পাখি যারা শীতকালে প্রচন্ড ঠান্ডার মাঝেও ডানা মেলে উড়তে পারে এবং নিজেদেরকে পরিবেশের সাথে টিকে থাকার লড়াই করতে পারে । আবার কিছু কিছু পরিযায়ী পাখি রয়েছে যারা ঠান্ডা সহ্য করতে পারে না ।
যখন শীত প্রধান দেশে প্রচন্ড ঠান্ডা পড়ে যায় তখন ওই সকল এলাকার পরিযায়ী পাখি গুলো যেখানে উষ্ণ প্রদান দেশ রয়েছে সেখানে চলে যায় এবং ঐ সকল এলাকা গুলোতে তাদের খাবারের সন্ধানে বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে থাকে । তখন আমরা উষ্ণপ্রধান দেশে বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি দেখতে পাই ।
আমাদের বাংলাদেশের বিল ও নদী গুলোতে অসংখ্য প্রজাতির পরিযায়ী পাখি দেখা যায় । আমরা এখন সেরা কিছু পরিযায়ী পাখির নাম সম্পর্কে জানব । আপনাদের সুবিধার্থে ঐ সকল পরিযায়ী পাখির নাম গুলো নিচে তুলে ধরা হলো ।
সরালি হাঁস
সরালি হাঁস বাংলাদেশের অন্যতম পরিচিত পরিযায়ী হাঁস । এদের দেহ ছোট ও লম্বাটে হয় গায়ের রঙ বাদামি ছোপ যুক্ত থাকে । এরা সাধারণত বিল, হাওর, ও জলাভূমিতে দল বেঁধে থাকে । বাকলির মতো কণ্ঠস্বর হওয়ার কারণে গ্রামাঞ্চলে একে “বাকলি হাঁস”ও বলা হয় ।এদের খাদ্যতালিকায় ছোট মাছ, জলজ উদ্ভিদ ও পোকামাকড় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ।
গাংচিল
গাংচিল সাধারণত সমুদ্র উপকূল ও নদী ধারে বেশি দেখা যায় । এরা মাঝারি আকারের, সাদা শরীর ও ধূসর ডানা বিশিষ্ট হয় । এরা মূলত মাছ ও ছোট জলজ প্রাণী খেয়ে বেঁচে থাকে । এরা খুব দক্ষ উড়ান সম্পন্ন এবং পানির ওপর থেকে খাবার সংগ্রহ করে থাকে ।
মানুষের ফেলা খাবারও খেতে অভ্যস্ত, বিশেষত বন্দর ও নৌযানের আশেপাশে । অবকাশ যাপনের জায়গায় এদের উড়তে দেখা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে ।
লাল শির হাঁস
লাল শির হাঁসের মাথা উজ্জ্বল লালচে বাদামি রঙের হয় । পুরুষ পাখির গলা ও বুক লালচে এবং স্ত্রী পাখির রঙ তুলনামূলক ফ্যাকাশে থাকে । এরা মূলত শীতকালে বাংলাদেশে আসে এবং বিভিন্ন জলাশয়ে থাকে । এদের খাদ্যতালিকায় জলজ উদ্ভিদ, শৈবাল ও ছোট পোকামাকড় থাকে । গ্রীষ্মকালে উত্তর এশিয়ার দেশগুলোতে প্রজনন শুরু করে । শিকার ও আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে এই পাখির সংখ্যা দিন দিন কমছে ।
চখা চখি
চখা চখি নদীর ধারে, বিল ও জলাশয়ে বেশি দেখা যায় । এদের শরীর বাদামি, ডানা সবুজ ও চোখ লালচে রঙের হয় । এরা জোড়ায় জোড়ায় থাকতে খুব পছন্দ করে এবং সারাজীবন এক সঙ্গে থাকে। নদীর ধারে বালুকাময় অঞ্চলে এরা বাসা বাঁধে । এদের খাদ্য তালিকায় জলজ উদ্ভিদ ও ছোট প্রাণী রয়েছে । বাংলাদেশে এদেরকে সৌভাগ্যের প্রতীক মনে করা হয় ।
জল পিপি
জল পিপি নদী, খাল-বিল ও জলাভূমির ধারে বসবাস করে থাকে । এরা ছোট আকৃতির, সরু ঠোঁট ও লম্বা পা বিশিষ্ট হয় । এরা খাদ্য হিসেবে ছোটমাছ, পোকামাকড় ও জলজ উদ্ভিদ খেয়ে থাকে । প্রজনন মৌসুমে এদের গলার স্বর অনেক বেশি স্পষ্ট শোনা যায় । এরা দ্রুত উড়তে পারে এবং বেশ সতর্ক প্রকৃতির পাখি । শিকার ও পরিবেশ দূষণের কারণে এই পাখির সংখ্যা দিন দিন কমছে ।
পাতি সরালি
পাতি সরালি হাঁস বাংলাদেশে সারা বছরই দেখা যায় । এদের গায়ের রঙ বাদামি ও ডানার উপর উজ্জ্বল সবুজ রেখা থাকে । এরা পানিতে ভাসতে ও ডুব দিয়ে খাবার খেতে দক্ষ । এরা মূলত জলজ উদ্ভিদ ও ছোট প্রাণী খেয়ে থাকে । নদী, খাল, বিল ও পুকুরে দল বেঁধে চলাচল করে এবং সুরক্ষিত পরিবেশে এরা সহজেই বংশবৃদ্ধি করতে পারে ।
সাদা বুক হরিয়াল
সাদা বুক হরিয়াল একটি মাঝারি আকারের ফল ভোজী পাখি । এদের বুক ও পেট ফ্যাকাশে সাদা এবং পিঠ সবুজ রঙের হয় ।এরা সাধারণত উঁচু গাছে বাসা বাঁধে এবং গাছের ফল খেয়ে জীবনধারণ করে । বাংলাদেশের সুন্দরবন ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় এদের পাওয়া যায় । শিকার ও বন ধ্বংস হওয়ার কারণে এদের সংখ্যা দিন দিন কমছে ।
সরালি বাটান
সরালি বাটান মূলত সরালি হাঁসের একটি উপ প্রজাতি । এদের চেহারা ছোট, গায়ে বাদামি ও কালো দাগ যুক্ত পালক থাকে । এরা পানির ওপর সাঁতার কাটতে ও ডুব দিতে খুব দক্ষ । এরা ছোট জলজ প্রাণী, পোকামাকড় ও উদ্ভিদ খেয়ে থাকে । এরা দলবদ্ধ ভাবে চলাচল করতে পছন্দ করে ।
কমলা ঠোঁট রাজহাঁস
কমলা ঠোঁট রাজহাঁসের বৈশিষ্ট্য হল উজ্জ্বল কমলা রঙের ঠোঁট । এরা বড় আকারের এবং সাধারণ রাজহাঁসের তুলনায় বেশি শক্তিশালী হয় । মূলত ইউরোপ ও এশিয়ার ঠান্ডা অঞ্চলে বসবাস করে থাকে । শীতের সময় দক্ষিণ এশিয়ায় অভিবাসন করে ।পানির কাছে ঘাস, উদ্ভিদ ও ছোট প্রাণী খেয়ে জীবন ধারণ করে থাকে ।
সরালি রাজহাঁস
সরালি রাজহাঁস একটি শক্তিশালী ও বড় আকৃতির হাঁস । এদের দেহ ফ্যাকাশে ধূসর ও মাথার পাশে সাদা রেখা থাকে । এরা উচ্চ স্বরে ডাকতে পারে এবং দ্রুত উড়তে সক্ষম । এরা প্রজনন মৌসুমে নির্দিষ্ট অঞ্চল থেকে অন্যত্র চলে যায় । এরা মূলত ঘাস, জলজ উদ্ভিদ ও ছোট প্রাণী খেয়ে থাকে ।
পরিযায়ী পাখিরা কোথায় থাকে
যখন শীতকাল পড়ে তখন বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে পরিযায়ী পাখির দেখা মেলে । বিশেষ করে সুন্দরবন, সিলেটের হাওর কক্সবাজারের নাফ নদী এবং রাজশাহীর পদ্মার পাশে বিচিত্র প্রজাতির পরিযায়ী পাখির সন্ধান পাওয়া যায় । এই সকল জায়গা গুলো সাধারণত আমাদের অতিথি পাখিরা এসে আমাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে থাকে ।
আমরা পরিযায়ী পাখি দেখার পর প্রকৃতির সাথে নিজেদেরকে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত করতে পারি । এই পাখি গুলো আমাদের আগাম শীতের বার্তা দিয়ে যায় এবং কিভাবে নিজেদেরকে ধৈর্য ও অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে প্রতিকূল পরিবেশে সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয় তারা আমাদের শিক্ষা দিয়ে যায় ।
কেন পরিযায়ী পাখি রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব
বর্তমানে দেশে পরিবেশের ভারসাম্য দিন দিন নষ্ট হচ্ছে । এর ফলে আমরা আর আগের মত বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি দেখতে পাইনা । এই সকল পাখি গুলোর না থাকার কারণে আমরা বিভিন্ন রকম সমস্যাই ভুগছি । যা আমাদের ভবিষ্যৎে প্রজন্মের জন্য হুমকি স্বরূপ হয়ে দাঁড়াবে ।
- এখন আমরা পরিযায়ী পাখি রক্ষা করা সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য জানবো । নিচে সেই তথ্য গুলো তুলে ধরা হলো ।
- পরিযায়ী পাখীরা সাধারণত কীট পতঙ্গ ও আগাছা নির্মূল করে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে থাকে ।
- এই পাখি গুলো বিভিন্ন ধরনের বীজ ছড়িয়ে গাছপালা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে ।
- এই পাখি গুলো জলাশয়ে থাকা বিভিন্ন রকম ক্ষতিকর কীট পতঙ্গ খেয়ে পানি পরিষ্কার করে ।
- পরিযায়ী পাখিগুলো দেখতে সুন্দর হওয়ায় তা দেখার জন্য পর্যটকরা ভিড় জমায় । এর ফলে আমাদের অর্থনীতি সচল হয়ে থাকে ।
- এই পাখি গুলো বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের প্রজনন শুরু করে যা আবার নতুন প্রজাতির টিকে থাকতে সহায়তা করে ।
উপরের তথ্যগুলো পড়ে আপনি নিঃসন্দেহে বুঝতে পারছেন কেন পরিযায়ী পাখি আমাদের রক্ষা করা দায়িত্ব ও কর্তব্য । শুধুমাত্র এই তথ্য গুলোই নয় আর অসংখ্য দত্ত রয়েছে যা আপনি জানলে আজই নিজ উদ্যোগে পরিযায়ী রক্ষা করতে সহায়তা করবেন ।
আমাদের শেষ কথা
সম্মানিত পাঠক, আজকের পোস্টটিতে আমরা বর্তমান সময়ে বিচিত্র প্রজাতির কিছু পরিযায়ী পাখির নাম সম্পর্কে জানতে পেরেছি । তাছাড়া এই পরিযায়ী পাখিরা কোথায় থাকে এবং কেন আমাদের তাদের রক্ষা করা দরকার এই বিষয় সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরেছি । আপনি যদি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়েন তাহলে অবশ্যই পরিযায়ী পাখি সম্পর্কে ইতিমধ্যে জেনে গেছেন ।
আশা করি আমার এই পোস্টটি পড়ে আপনার খুবই ভালো লেগেছে । সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে আপনি যদি সামান্যতম উপকার পান তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধব ফ্যামিলিতে এই পোস্টটি শেয়ার করুন । তাছাড়া আমার এই পোস্ট সম্পর্কে যদি আপনার কোন মন্তব্য থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টে জানান । ধন্যবাদ ।