বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যেতে কত টাকা লাগে যখন এই কথাটি সচরাচর শুনে থাকি । কেননা বর্তমান সময়ে অর্থনীতির দিক বিবেচনা করে সারা বিশ্বের উন্নত ও শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে সবার প্রথমে রয়েছে আমেরিকা অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র । এখানকার জীবন যাত্রার মান অন্যান্য দেশগুলোর থেকে অনেক ভালো এবং উন্নত । আমরা প্রায় সকলেই চাই লাক্সারি লাইফ উপভোগ করতে তাই প্রতিনিয়ত উন্নত দেশ গুলো খুঁজে থাকি ।
আপনি যদি জীবনটাকে উপভোগ করতে চান এবং পরিবারের সকলকে হাসি ও খুশি রাখতে চান তাহলে প্রতিমাসে মোট অংকের টাকা উপার্জন করতে হবে । আমেরিকা যেহেতু উন্নত একটি দেশ সেহেতু এখানে অনেক বেশি কাজের চাহিদা রয়েছে এবং প্রতি মাসে ভালো অর্থ উপার্জন করা যায় ।
আরও পড়ুন>>>রোমানিয়া ভিসার দাম কত
আমাদের মাঝে অনেক যুবক-যুবতী রয়েছে তাদের অনেকের স্বপ্ন আমেরিকায় প্রবাসী হওয়া । আপনি যদি আমেরিকায় অভিবাসী অথবা কাজের ভিসায় যান তাহলে সেখানে ভালো কোন কোম্পানিতে কাজ করলে প্রতি মাসে মোট অংকের অর্থ উপার্জন করতে পারবেন ।
আমরা যখন আমেরিকা যাওয়ার কথা মাথায় আনি তখন সবার প্রথমে প্রশ্ন আসে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যাওয়ার জন্য কত টাকা খরচ লাগে, ভিসা পেতে কি কি যোগ্যতা লাগে এবং কোন মাসে সবচেয়ে কম খরচে আমেরিকায় যাওয়া যায় । এই সকল তথ্য আমাদের অবশ্যই জেনে রাখা খুব জরুরী ।
আপনাদের কথা চিন্তা-ভাবনা করে আজকের এই পোস্টে আমি আলোচনা করতে চলেছি বর্তমান সময়ের উন্নত দেশ যুক্তরাষ্ট্রে যেতে কত টাকা লাগবে, কত সময় দরকার, কি কি ভিসা রয়েছে এবং বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান ভাড়া কত ইত্যাদি । আপনি যদি একজন আমেরিকান প্রবাসী হিসেবে নিজেকে ভেবে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন ।
আমেরিকাতে কত ধরনের ভিসা চালু আছে
আমরা যখন আমেরিকায় যাওয়ার কথা চিন্তাভাবনা করি তখন আমাদের অবশ্যই জানতে হবে সেখানে মোট কত প্রকার ভিসা চালু রয়েছে । এর মূল কারণ হচ্ছে আমরা যদি ব্যক্তিগত ভাবে ভিসার জন্য আবেদন করতে চাই তাহলে কোন ভিসাটি ভালো হবে এবং ভেজাল হবে না সে সম্পর্কে কিন্তু জানতে পারবো না ।
তাছাড়া আপনি যদি কারো মাধ্যমে অর্থাৎ দালাল দিয়ে ভিসা আবেদন করে থাকেন তাহলে হয়তো আপনাকে সেই ব্যক্তি জাল ভিসা অর্থাৎ ভুয়া ভিসাও দিয়ে দিতে পারে । এতে দেখা গেল আপনি আমেরিকায় গিয়ে পুলিশের খপ্পরে পড়তে পারেন এবং জেল খেটে বাংলাদেশে চলেও আসা লাগতে পারে ।
তাই আপনাদের কথা চিন্তাভাবনা করে এখন নিচে আমি আমেরিকায় বর্তমানে চলমান বেশ কয়েকটি ভিসার নাম তুলে ধরলামঃ
- আমেরিকা টুরিস্ট ভিসা
- আমেরিকা কাজের ভিসা
- আমেরিকা চিকিৎসা ভিসা
- আমেরিকান ধর্মীয় ভিসা
- আমেরিকান অভিবাসী ভিসা
- আমেরিকা স্টুডেন্ট ভিসা
উপরের যতগুলো ভিসার নাম তুলে ধরলাম আশা করা যায় আপনি এই সকল ভিসা গুলোর মধ্যে যে কোন একটি খুঁজছেন । যদি কাজের জন্য যান তাহলে কাজের ভিসা, ধর্মীয় কাজের জন্য ধর্মীয় ভিসা, চিকিৎসার জন্য চিকিৎসা ভিসা, ভ্রমণ করার জন্য টুরিস্ট ভিসা এবং পড়াশোনার জন্য স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে আমেরিকায় যেতে পারেন ।
আমেরিকার ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা কি কি
আপনি যদি আমেরিকায় যেতে চান তাহলে অবশ্যই ভিসার দরকার পড়বে । কেননা আপনি ভিসা ছাড়া আমেরিকায় যেতে পারবেন না । আর যদি আপনি অবৈধভাবে ভিসা ছাড়া অথবা জাল ভিসা নিয়ে আমেরিকায় যান তাহলে লাভের থেকে ক্ষতির বেশি সম্মুখীন হবেন । সেখানকার পুলিশ অবশ্যই আপনাকে গ্রেফতার করবে এবং জেলেও প্রেরণ করতে পারে ।
এই ভিসা পাওয়ার জন্য আপনাকে বেশ কিছু নিয়ম ফলো করতে হবে । যেমনঃ আপনি আমেরিকান ভিসার জন্য নিজে সরাসরি আবেদন করবেন । কোন প্রকার দালাল দ্বারা আবেদন করবেন না । এতে দেখা যাবে দালাল আপনাকে ভুয়া অর্থাৎ ডুপ্লিকেট ভিসা ধরিয়ে দিবে ।
আরও পড়ুন ➝ ইতালি স্পন্সর ভিসা ২০২৪ আবেদন
আমেরিকান ভিসা পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে সরাসরি আবেদন করার সুযোগ রয়েছে । শুধুমাত্র আপনি সরকারি ভাবে আবেদন করে আমেরিকায় যেতে পারবেন । আপনি যদি পড়াশোনা করার জন্য সেখানে যেতে চান তাহলে স্টুডেন্ট ভিসা সিলেক্ট করে আবেদন করেন ।
আর যদি কাজের জন্য যেতে চান তাহলে ওয়ার্ক ভিসা, ভ্রমণ করার জন্য টুরিস্ট ভিসা, ধর্মীয় আলোচনা ও স্বভা প্রচার করার জন্য ধর্মীয় ভিসা এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য মেডিকেল ভিসা এর মাঝে যে ক্যাটাগরির বিষয়টি আপনার পছন্দ সেটি নিজে সরাসরি বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক আবেদন করে ভিসা সংগ্রহ করবেন ।
বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যেতে কত টাকা লাগে
আপনার ভিসার ধরনের উপর নির্ভর করবে বাংলাদেশ হতে আমেরিকায় যেতে কত টাকা ব্যয় করতে হবে । টুরিস্ট ভিসার জন্য এক রকম ব্যয় হবে, কাজের ভিসার জন্য আরেক রকম এবং চিকিৎসার জন্য আরেক রকম । এখন নিচে কোন ভিসার জন্য কত টাকা খরচ করতে হবে তা তুলে ধরা হলোঃ
টুরিস্ট ভিসা – আপনি যদি টুরিস্ট ভিসা সংগ্রহ করেন তাহলে এর জন্য আবেদন ফি হিসেবে আপনাকে জমা দিতে হবে ১৩৯৯৯ টাকা । এই ভিসার মেয়াদ থাকবে সর্বোচ্চ ৬ মাস । আপনি যদি এই ভিসাটি পেতে চান তাহলে অবশ্যই বেশ কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে ।
যেমনঃ নেপাল, মালদ্বীপ, ভুটান এবং থাইল্যান্ড এ সকল দেশ ভ্রমণ করার ডকুমেন্টস আপনার কাছে থাকতে হবে । তাহলে আপনি আমেরিকান ভিজিট ভিসা অর্থাৎ টুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন এবং ভ্রমণ করতে পারবেন ।
কাজের ভিসা – আপনি যদি আমেরিকায় কাজ করার জন্য যেতে চান তাহলে অবশ্যই কাজের ভিসা অর্থাৎ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা জন্য আবেদন করতে হবে । এর জন্য আপনাকে আবেদন ফি হিসেবে জমা দিতে হবে ১৭ হাজার টাকা । আপনি যে কাজের জন্য আমেরিকায় যাবেন অবশ্যই সেই কাজে পর্যাপ্ত পরিমাণ অভিজ্ঞতা থাকতে হবে ।
চিকিৎসা ভিসা – আপনার যদি নিজস্ব অথবা ফ্যামিলির কোন ব্যক্তির উন্নত চিকিৎসার দরকার হয় তাহলে আমেরিকায় চিকিৎসা ভিসা সংগ্রহ করে যেতে পারেন । এর জন্য আপনাকে মেডিকেল ভিসা হিসেবে ১৪ হাজার টাকা আবেদন ফি হিসেবে পেমেন্ট করতে হবে । তবে এখানে অবশ্যই উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের সার্টিফিকেট থাকতে হবে ।
উপরে আপাতত তিনটি ভিসার জন্য আবেদন করার পর কত টাকা ফি প্রদান করতে হবে তা তুলে ধরেছি । অনেকে আবার এটা মনে করবেন না আপনি এই অল্প টাকায় আমেরিকায় চলে যেতে পারবেন । সাধারণত আমেরিকায় যেতে হলে আপনাকে ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকা খরচ করতে হবে ।
বাংলাদেশ থেকে আমেরিকার বিমান ভাড়া কত
আপনি যদি আমেরিকায় যাওয়ার জন্য বিমানের ভাড়া কত টাকা সেটা জানতে চান তাহলে সবার প্রথমে আপনাকে আমেরিকায় কোন রাজ্য অর্থাৎ স্টেটে যেতে চান সেটি সিলেক্ট করতে হবে । প্রতিটি রাজ্যের জন্য আলাদা আলাদা বিমান ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে । এখন নিচে কোন রাজ্যের জন্য কত টাকা বিমান ভাড়া তা তুলে ধরা হলোঃ
- বাংলাদেশ থেকে নিউইয়র্ক বিমান ভাড়া ১ লক্ষ ৪০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা ।
- বাংলাদেশ থেকে ওয়াশিংটন বিমানের ভাড়া ১ লক্ষ ৬০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা ।
- বাংলাদেশ থেকে টেক্সাস বিমান ভাড়া ১ লক্ষ ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৮৫হাজার টাকা ।
- বাংলাদেশ থেকে শিকাগো যাওয়ার বিমান ভাড়া ১ লক্ষ ৪০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা ।
- বাংলাদেশ থেকে ক্যালিফোর্নিয়া যাওয়ার বিমান ভাড়া ১ লক্ষ ৬০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা ।
তাছাড়া আপনি আমেরিকায় ৫০ টি রাজ্যের মধ্যে অন্য যেকোনো রাজ্যে বাংলাদেশ থেকে বিমানে করে যেতে কত টাকা ভাড়া লাগবে তা জানতে এবং ভিসার জন্য আবেদন করতে ভিজিট করুন https://bd.usembassy.gov/visas/ । এটি সরাসরি আমেরিকান ভিসা আবেদন করার ওয়েবসাইট ।
উল্লেখ্য উপরে যতগুলো রাজ্যে যাওয়ার জন্য বিমান ভাড়ার টাকা উল্লেখ করেছি সেগুলোর মূল্য বর্তমান ডলারের রেট অনুযায়ী ধরা হয়েছে । তবে ডলারের মান যেহেতু কমবেশ হয়ে থাকে তাই এই টিকিটের মূল্য সময়ের সাথে সাথে কম অথবা বেশি হতে পারে ।
বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যেতে কত সময় লাগে
আমরা অনেকে হয়তো জানি না যুক্তরাষ্ট্র অর্থাৎ আমেরিকাতে আপনি চাইলে কিন্তু সরাসরি বাংলাদেশ থেকে যেতে পারবেন না । তাহলে এখন আমাদের প্রশ্ন হতে পারে আমরা কিভাবে আমেরিকায় পৌঁছে দিতে পারব? সবার প্রথমে আপনাকে বাংলাদেশ থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে বিমানবন্দরে পৌঁছাতে হবে ।
তারপর দুবাই বিমানবন্দর থেকে আমেরিকান যে রাজ্যে যাবেন সেই বিমানবন্দরে পৌঁছাতে হবে । সবার প্রথমে বাংলাদেশ থেকে দুবাই পৌঁছাতে সর্বোচ্চ সময় লাগবে ৫ ঘন্টার মত । সেই সাথে দুবাই থেকে আমেরিকায় পৌঁছাতে আমাদের সর্বোচ্চ সময় লাগবে ২০ ঘন্টার মত ।
এখন আমরা যদি ক্যালকুলেশন করি তাহলে বাংলাদেশ টু দুবাই ৫ ঘন্টা এবং দুবাই টু আমেরিকা 20 ঘন্টা সমান ২৫ ঘন্টা দাঁড়াই । অতএব আমরা বলতে পারি সাধারণত বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাতে আমাদের সর্বোচ্চ সময় লাগতে পারে ২৫ ঘন্টা অর্থাৎ ১ দিন থেকে কিছু সময় বেশি ।
বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা কত কিলোমিটার
আমাদের অনেকের মাঝে ইতিমধ্যে জানার আগ্রহ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকার দূরত্ব কত কিলোমিটার অথবা কত মাইল । আপনি যদি এ সম্পর্কে গুগলে এসে সার্চ করেন তাহলে গুগল ম্যাপ অথবা উইকিপিডিয়া অথবা অন্যান্য ওয়েবসাইট আপনাকে এ সম্পর্কিত তথ্য প্রদর্শন করবে ।
উইকিপিডিয়া এবং গুগল ম্যাপের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আমরা জানতে পারি বাংলাদেশ হতে আমেরিকার দূরত্ব ১৩২১৯ কিলোমিটার । এটাকে যদি আমরা মাইল হিসেবে বিবেচনা করি তাহলে গিয়ে দাঁড়ায় ৮২১৯ মাইল ।
কোন মাসে আমেরিকা সবচেয়ে কম খরচে যাওয়া যায়
আমরা ইন্টারনেটে অথবা বাস্তবে অনেকের মুখে শুনতে পাই আমেরিকায় নাকি বেশ কিছু মাস রয়েছে সে সময় গেলে কম খরচে যাওয়া যায় । এই কথাটি কতটুকু সত্য তা অনেকেই হয়তো আমরা জানিনা । উল্লেখ্য আপনি বছরের যে কোন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের কাজের জন্য, স্টুডেন্ট ভিসা বা ভ্রমণ করার জন্য যেতে পারেন তা নির্ধারিত করা নেই ।
তবে আপনি বছরের শুরুতে অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রে যান তাহলে কম খরচে যেতে পারবেন । সাধারণত এই মাস বছরের নতুন মাস এবং এ মাসে ভিসা প্রসেসিং সম্পর্কিত কাজের চাপ কম থাকে তাই কম টাকায় ভিসা করার সুবর্ণ সুযোগ পাওয়া যায় । তাছাড়া অন্যান্য সকল মাসে আমেরিকা যাওয়ার জন্য সমান টাকাই দরকার হয় ।
আমাদের শেষ কথা
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, আজকের পোস্টে আমি আলোচনা করেছি আমাদের বহুল প্রতীক্ষিত এবং স্বপ্নের দেশ যুক্তরাষ্ট্র অর্থাৎ আমেরিকাতে যেতে কত টাকা লাগবে, কত সময় দরকার, কি কি ভিসা রয়েছে, কোন ভিসার জন্য কত টাকা, আমেরিকার বিমান ভাড়া কত এবং সেখানের কত দূরত্ব কিলোমিটার । আপনি যদি আমেরিকায় যাওয়ার জন্য আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই তথ্যগুলো জেনে রাখবেন ।
আপনি যদি আমার এই পোস্টটি পড়েন সম্পর্কে সামান্যতম উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আমার এই পোস্টটি লিখে নিজেকে সার্থক বলে মনে করব । যদি ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু বান্ধবদের সাথে শেয়ার করবেন । আজকের মত এখানেই শেষ করছি । সবাই ভালো থাকুন । সুস্থ থাকুন । আল্লাহ হাফেজ ।