আপনি কি বিধবা ভাতা অনলাইনে আবেদন করার নিয়ম খুঁজছেন? যদি উত্তরটি হ্যাঁ, হয় তাহলে বলবো সঠিক জায়গাতে এসেছেন । বর্তমানে আমাদের সমাজে অনেক মহিলা অল্প বয়সে বিধবা হয় অর্থাৎ তার স্বামী মারা যায় । তখন এমন অবস্থায় মারা যায় সংসার চালানোর মতো কোনো অর্থ থাকে না ।
ওই ব্যক্তির যদি কোন সন্তান থেকে থাকে তাহলে তাদেরকে দুবেলা দুমুঠো ভাত দেওয়া অনেক মহিলার ক্ষেত্রে কষ্ট হয়ে যায় । যদি ছেলে ওই মহিলার জন্য কোন অর্থ বা জায়গা না রেখে যায় তাহলে দেখা যায় সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করতে হয় । আর এতে সবচেয়ে বেশি সন্তানের কষ্ট হয় ।
আরও পড়ুন ➝ প্রতিবন্ধী ভাতা আবেদন অনলাইনে করার নিয়ম
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ঐ সকল স্বামী হারা মহিলাদের কথা চিন্তাভাবনা করে সমাজসেবা অধিদপ্তরে একটি সামাজিক ভাতা ব্যবস্থা চালু করেছে । যে ব্যবস্থাটির মাধ্যমে স্বামী মারা যাওয়ার পরেও ওই মহিলা তার সন্তানদেরকে নিয়ে দুবেলা দুমুঠো ভাত খেতে পারবে এবং খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকতে পারবে ।
হ্যাঁ, এই সামাজিক ব্যবস্থাটির নাম হচ্ছে বিধবা ভাতা । আমরা প্রায় সকলের এই কথাটি শুনে থাকবো । আপনার আশপাশে বা ফ্যামিলির কোন মহিলার স্বামী যদি মারা যায় তাহলে অবশ্যই উনাকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতে না পারলেও কিভাবে অনলাইনে বিধবা ভাতার আবেদন করা যায় সে সম্পর্কে সাহায্য করবেন । এতে আল্লাহ আপনার উপর খুশি হবে ।
আজকের পোস্টে আমাদের আলোচনার মূল বিষয় হচ্ছে বিধবা ভাতা কি, এই ভাতা কারা কারা পাবে, কারা কারা পাবে না, বিধবা ভাতা আবেদন করার জন্য কি কি ডকুমেন্ট লাগবে এবং প্রতি মাসে একজন বিধবা নারীর ভাতা কত টাকা দেওয়া হবে । আপনি যদি এ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো পোস্টটি থাকুন ।
বিধবা ভাতা কি
বিধবা ভাতা হলো বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত একটি সামাজিক ভাতা যা সাধারণত স্বামী হারা মহিলাদেরকে দেওয়া হয় । তবে স্বামী মারা যাওয়ার পর সকল মহিলা কিন্তু এই ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবে না । যদি মহিলার পরিবার আর্থিকভাবে সচ্ছল হয় তাহলে সে ব্যক্তি বিধবা ভাতার জন্য আবেদন করা সুযোগ পাবে না ।
আর যদি কোন মহিলা পারিবারিকভাবে আর্থিক অবস্থা অসচ্ছল এবং সংকটাপ্নন হয় তাহলে তার জন্য এই বিধবা ভাতা সরকার দিবে । এই ভাতা বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৮ ৯৯ অর্থবছরে সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক চালু করা হয়েছে । স্বামী মারা যাওয়ার পর একজন মহিলা যাতে আর্থিকভাবে সচ্ছল হতে পারে তার জন্য এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে ।
বিধবা ভাতা কারা কারা পাবে?
আপনার যদি বয়স কম হয় এবং আপনার স্বামী যদি মারা যায় তাহলে বিধবা ভাতার জন্য চাইলে আবেদন করতে পারেন । তবে এখানে একটি বিষয় সবসময় মাথা রাখবেন বিধবা ভাতা হচ্ছে সম্পূর্ণ সামাজিক একটি ভাতা যা শুধুমাত্র সমাজের অসচ্ছল ও অবহেলিত মহিলাদের জন্য চালু করা হয়েছে । যদি আপনার আর্থিক অবস্থা ভালো হয় তাহলে এই ভাতার জন্য আবেদন করবেন না ।
আরও পড়ুন ➝ সরকারি স্কুলে লটারির ফলাফল ২০২৪
আপনি যদি আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তি হন অর্থাৎ ভালোমতো চলাফেরা এবং সন্তানদের দেখাশোনা করার মত অর্থ থাকে তাহলে আবেদন না করাই ভালো । কারণ এতে অন্য অসহায় মহিলারা আবেদন করার সুযোগ পাবে । সে নিজে এবং তার সন্তানদের নিয়ে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার সংগ্রাম করার সুযোগ পাবে । অতএব বলা যায় বিধবা ভাতাটি শুধুমাত্র হতদরিদ্র বা অসহায় স্বামীহারা নারীদের জন্য প্রযোজ্য ।
বিধবা ভাতা আবেদন করতে কি কি লাগে
এতক্ষণ আমরা জানতে পারলাম বিধবা ভাতা আসলে কি এবং কারা কারা এই ভাতার জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি । এখন আমরা জানবো অনলাইনে বিধবা ভাতার আবেদন করার জন্য কি কি ডকুমেন্ট লাগবে । আপনি যদি এই ভাতা আবেদন করতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই সবার প্রথমে ডকুমেন্টগুলো সংগ্রহ করে নিবেন । ডকুমেন্ট গুলো নিচে তুলে ধরা হলোঃ
- জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি
- স্বামীর মৃত্যুর সনদপত্রের ফটোকপি
- দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- মোবাইল ফোন নাম্বার (সচল নাম্বার)
- বিকাশ রকেট বা নগদ অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে
- বিধবা ভাতা আবেদন ফরম সাবমিট করা
একজন বিধবা নারীর অনলাইনে বিধবা ভাতা আবেদন করার জন্য উপরে যতগুলো ডকুমেন্ট দেওয়া হয়েছে সেগুলো অবশ্যই অবশ্যই লাগবে । অন্যথায় সেই ব্যক্তি আবেদন করতে পারবেন না । তবে আবেদন করার পূর্বে অবশ্যই ডকুমেন্ট গুলো সত্য হতে হবে । ভুলভাল তথ্য দিলে আপনার আবেদন বাতিল বলে গণ্য হবে ।
বিধবা ভাতা অনলাইনে আবেদন করার নিয়ম
আপনি যদি অনলাইনে বিধবা ভাতার জন্য আবেদন করতে চান তাহলে https://shorturl.at/qyDJ8 লিংকে প্রবেশ করুন । তারপর নিচের দিকে স্ক্রল করে এসে দেখতে পাবেন বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত ভাতা আবেদন ফরম রয়েছে । এখন এই ফরমটি আপনাকে ডাউনলোড করতে হবে । ফর্ম টি পিডিএফ আকারে রয়েছে যা আপনি খুব সহজে এডিট করতে পারবেন ।
ধাপ ১ – সবার প্রথমে ফরমে কার্যালয় এবং জেলার নাম দিবেন । তারপর যথাক্রমে বয়স, নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, মৃত স্বামীর নাম ঠিকানা (বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা) এবং আবেদনকারীর বার্ষিক গড় আয় সহ যা যা তথ্য দিতে বলবে সব কিছু সুন্দর ভাবে পূরণ করে নিবেন ।
ধাপ ২ – এখন মনোনীত ব্যক্তির নাম, ঠিকানা, ভাতা গ্রহিতার সঙ্গে সম্পর্ক, মনোনীত ব্যক্তির নমুনা স্বাক্ষর অথবা টিপসহি, ভাতা ভোগীর স্বাক্ষর বা টিপসহি, এবং তারিখ দিতে হবে । সবশেষে আবেদনকারীর স্বাক্ষর অথবা টিপসহি এবং আবেদনকারীর নাম লিখে ফরম পূরণ কাজ সম্পন্ন করতে হবে ।
ধাপ ৩ – আপনার আবেদন সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর আবেদন ফরম ডাউনলোড করতে হবে । তারপর সেটি প্রিন্ট করে আপনার ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার অথবা চেয়ারম্যানের কাছে জমা দিতে হবে । তাছাড়া আপনি চাইলে সরাসরি উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর অফিসে জমা দিতে পারবেন ।
আপনারা যারা বিধবা ভাতার জন্য আবেদন করবেন তারা অবশ্যই একটা বিষয় মাথায় রাখবেন আবেদনকারীর গড় বাৎসরিক আয় ১০ হাজার টাকার নিচে হতে হবে । যদি আপনার বাৎসরিক আয় বেশি হয় তাহলে কিন্তু আপনার আবেদন বাতিল হবে । তাই অবশ্যই মনে রাখবেন আপনি যদি অসচ্ছল, অসহায় এবং নিপীড়িত ব্যক্তি হয়ে থাকেন তাহলে এই ভাতার জন্য আবেদন করবেন । অন্যথায় আবেদন করবেন না ।
বিধবা ভাতা কত টাকা দেওয়া হয়
অনলাইনে সফলভাবে আবেদন করার পর এখন আমরা জানবো প্রতি মাসে নাকি তিন মাস পর পর বিধবার ভাতা দেওয়া হয় এবং কত টাকা করে দেওয়া হয় । এই ভাতা সাধারণত তিন মাস পর পর দেওয়া হয় আবার অনেক সময় প্রতি মাসেও দেওয়া হয়ে থাকে । একজন বিধবা নারীর প্রতি মাসে ৫৫০ টাকা নাগাদ বিধবার ভাতা পাবেন ।
একটা সময় ছিল এই ভাতার টাকা তোলার জন্য একজন বিধবা নারীকে ইউনিয়ন পরিষদ অথবা উপজেলা পরিষদে যেতে হতো । কিন্তু বর্তমান সময়ে অনলাইন মোবাইল ব্যাংকিং সারা দেশব্যাপী জনপ্রিয় হওয়ার পর সরকার সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে লাইন ধরে ইউনিয়ন পরিষদ বা উপজেলা পরিষদে ভাতার টাকা বন্ধ করে দিয়েছে । মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট বিকাশ, রকেট অথবা নগদ ব্যবহার করে প্রতি মাসে বা তিন মাস পর পর ভাতার টাকা নেওয়া যায় ।
FAQ – বিধবা ভাতা অনলাইন আবেদন করার নিয়ম
বিধবা ভাতা আবেদনের সাইট কোনটি?
অনলাইনে বিধবা ভাতা জনিত আবেদন করার ওয়েবসাইট হলোঃ https://shorturl.at/qyDJ8
প্রতিমাসে কত টাকা বিধবা ভাতা দেওয়া হয়?
প্রথম অবস্থায় প্রতি মাসে একজন অসহায় স্বামী হারা নারীকে ৫৫০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হয় । তবে এই ভাতার পরিমাণ সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয় ।
বিধবা ভাতার টাকা কিভাবে নেওয়া যায়?
আপনার যদি মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট যেমনঃ বিকাশ, রকেট অথবা নগদ থাকে তাহলে সেই একাউন্ট ব্যবহার করে ভাতার টাকা নিতে পারবেন ।
কত সালে বিধবার ভাতা সিস্টেম চালু করা হয়?
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তর ১৯৯৮-৯৯ অর্থ বছরে সর্বপ্রথম এই ভাতার চালু করে । যা সাধারণত আর্থিকভাবে অসচ্ছল, অসহায়, নিপীড়িত এবং অবহেলিত স্বামী হারা নারীদের জন্য প্রযোজ্য ।
শেষ কথা
সুপ্রিয় পাঠক বৃন্দ, আজকের পোস্টে আমরা জানতে পেরেছি সমাজের অসহায়, হতদরিদ্র, নিপীড়িত এবং অবহেলিত স্বামীহারা মহিলাদের আর্থিকভাবে সচল করার একমাত্র উপায় বিধবা ভাতা কিভাবে পাওয়া যায়, এই ভাতা প্রতি মাসে কত টাকা করে দেয় এবং অনলাইনে আবেদন করার সম্পূর্ণ পদ্ধতি । আপনি যদি একজন বিধবা হন অথবা আপনার পরিবারের অথবা আশপাশের কোন মহিলা বিধবা হলে উপরোক্ত নিয়ম ফলো করে আবেদন করে নিবেন ।
আমার এই পুরো পোস্ট পড়ার পর আশা করা যায় আপনি বিধবা ভাতা সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য অবগত হয়ে যাবেন । যদি আমার এই পোস্টটি পড়ে আপনি সামান্যতম উপকৃত হন তাহলে এই পোস্ট লিখতে যতটুকু কষ্ট হয়েছে তা সার্থক হবে বলে আমি মনে করি । যদি ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করবেন । অতএব আজকের মত এখানেই শেষ করছি । সবাই ভালো থাকুন । সুস্থ থাকুন । আল্লাহ হাফেজ ।
আমি পাঁচ মাসের
আপু আপনার প্রশ্নটি স্পষ্ট ভাবে বলুন দেখি আপনার কোন উপকার করা যায় কিনা ।