আপনাকে যদি বলা হয় এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ও উন্নত দেশের নাম কি? তাহলে নিঃসন্দেহে উত্তর আসবে লুক্সেমবার্গ । এটি পশ্চিম ইউরোপে অবস্থিত একটি স্থল বিশিষ্ট দেশ । অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অত্যন্ত শক্তিশালী দেশ হচ্ছে লুক্সেমবার্গ । তাই আমরা বেশিরভাগ মানুষ জানতে চাই লুক্সেমবার্গ যেতে কত টাকা লাগে ।
বিগত কয়েক দশক ধরে সারা বিশ্বের ১ নম্বর উন্নত ও ধনী দেশের তালিকায় রয়েছে লুক্সেমবার্গ । এই দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় তুলনামূলক অনেক বেশি । তাছাড়া সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে লুক্সেমবার্গে বেকারত্বের হার একদম কম বলতে গেলে বা এখানে কোন বেকার নেই বললেই চলে ।
আরও পড়ুন ➝ সরকারি ভাবে জাপান যাওয়ার উপায়
আমাদের বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষের টার্গেট হচ্ছে ইউরোপের উন্নত ও শীর্ষ ধনী দেশে গিয়ে কাজ করা এবং বিপুল পরিমাণে অর্থ উপার্জন করা । আপনি যদি কখনো ইউরোপে গিয়ে অর্থ উপার্জন করতে চান তাহলে সবার প্রথমের সারিতে রাখবেন লুক্সেমবার্গ ।
কেননা আপনি যদি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশে যান তাহলে নিঃসন্দেহে শুরুতে উচ্চ বেতনের চাকরি করতে পারবেন । আজকের পোস্টে আমরা লুক্সেমবার্গ যাওয়ার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব । আপনি যদি এই বিষয়ে জানতে আগ্রহী হন তাহলে পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন । তো চলুন শুরু করা যাক ।
লুক্সেমবার্গ যেতে কত টাকা লাগে
বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে লুক্সেমবার্গ যাওয়ার উপায় হচ্ছে দুইটি । প্রথমটি হচ্ছে সরকারি ভাবে লুক্সেমবার্গ যাওয়া এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে বেসরকারিভাবে লুক্সেমবার্গ যাওয়া । মূলত এই দুই মাধ্যমের উপর ভিত্তি করে আপনি টাকা খরচ করে লুক্সেমবার্গ পৌঁছাতে পারবেন তা বলা যায় ।
প্রতিবছর বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক লুক্সেমবার্গ বিভিন্ন কোম্পানিতে লোক নিয়োগ করা হয়ে থাকে । আপনি যদি সরকারিভাবে লুক্সেমবার্গ যেতে চান তাহলে খরচ হবে ৪ লাখ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত । যা বলতে পারি খরচের পরিমাণ তুলনামূলক অনেক কম ।
কিন্তু আপনি যদি কোন ভিসা এজেন্সি অথবা দালালের মাধ্যমে লুক্সেমবার্গ যেতে চান তাহলে আপনার খরচ হতে পারে ১০ লাখ টাকা থেকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত । তবে আপনার পরিবারের কেউ যদি ইতিমধ্যে সেখানে অবস্থান করে থাকে তাহলে কিছু টাকা কম খরচ করে যেতে পারবেন ।
লুক্সেমবার্গ যেতে কি কি লাগে
আপনি যদি লুক্সেমবার্গ যেতে চান তাহলে সবার প্রথমে লুক্সেমবার্গ ভিসা তৈরি করতে হবে । আর লুক্সেমবার্গ ভিসা তৈরি করার জন্য আপনার বেশ কিছু কাগজপত্রের দরকার হবে । এখন আমরা ওই সকল কাগজপত্রের নাম সম্পর্কে জানব । আপনাদের সুবিধার্থে তা নিচে তুলে ধরা হলো ।
- সম্পূর্ণ বাংলাদেশী বৈধ পাসপোর্ট
- জাতীয় পরিচয় পত্র ফটোকপি
- পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট
- মেডিকেল রিপোর্ট সার্টিফিকেট
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ভেরিফিকেশন
- ভিসা আবেদন ফ্রি প্রধান
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট ফটোকপি
আপনি যদি কখনো লুক্সেমবার্গ ভিসা আবেদন করতে চান তাহলে সবার প্রথমে উল্লেখিত কাগজপত্রগুলো সংগ্রহ করবেন । অতঃপর লুক্সেমবার্গ ভিসা আবেদন করার চেষ্টা করবেন ।
লুক্সেমবার্গ যাওয়ার উপায়
আপনি যদি পৃথিবীর সর্বোচ্চ ধনী দেশ লুক্সেমবার্গ যেতে চান তাহলে প্রথমে ভিসা তৈরি করতে হবে । আপনি ভিসা ছাড়া অথবা জাল ভিসা নিয়ে কখনো লুক্সেমবার্গ যাওয়ার চেষ্টা করবেন না । এক্ষেত্রে আপনার অবশ্যই পুলিশের হাতে ধরা পড়তে হবে । অতঃপর দেখা যাবে আপনাকে তারা জেলেও প্রেরণ করতে পারে ।
বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে লুক্সেমবার্গ যাওয়ার অন্যতম উপায় হচ্ছে লুক্সেমবার্গ টুরিস্ট ভিসা সংগ্রহ করা । আপনি যদি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ঘুরতে পছন্দ করেন তাহলে খুব সহজে লুক্সেমবার্গ টুরিস্ট ভিসা পেয়ে যাবেন ।
তাছাড়া আপনি যদি চান বিদেশ গিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করার জন্য তাহলে লুক্সেমবার্গ যেতে পারেন । বর্তমানে স্টুডেন্টদের জন্য লুক্সেমবার্গ স্টুডেন্ট ভিসা চালু রয়েছে । তাই আপনি চাইলে খুব সহজে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে লুক্সেমবার্গ যেতে পারেন ।
আরও পড়ুন ➝ দুবাই লেবার ভিসা কবে খুলবে
তবে আপনি যদি লক্সেমবার্গে গিয়ে কাজ করতে চান তাহলে অবশ্যই ভালো কোনো বিশ্বস্ত এজেন্সি খুঁজে বের করতে হবে । তাছাড়া আপনার পরিচিত কোন ব্যক্তি যদি ইতিমধ্যে লুক্সেমবার্গ অবস্থান করে তাহলে উনার রেফারেন্স আপনি চাইলে খুব সহজে যেতে পারবেন ।
এগুলো ছাড়াও প্রতি বছর বাংলাদেশ সরকার অধীনে অসংখ্য মানুষ লুক্সেমবার্গ নেওয়া হয়ে থাকে । ওই সময় সরকার কর্তৃক বিভিন্ন পরীক্ষা হয়ে থাকে । আপনি যদি সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেন তাহলে স্বল্প টাকা খরচ করে লুক্সেমবার্গ যেতে পারবেন ।
লুক্সেমবার্গ ভিসা আবেদনের নিয়ম
আমরা অনেকে জানতে চাই কিভাবে লুক্সেমবার্গ ভিসা আবেদন করা হয় । আপনি যদি লুক্সেমবার্গ ভিসার খরচের পরিমাণ কমাতে চান তাহলে অবশ্যই আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে । এখন আমরা জানব লুক্সেমবার্গ ভিসা আবেদনের নিয়ম সম্পর্কে । নিচে তা তুলে ধরা হলো ।
লুক্সেমবার্গ ভিসা আবেদনের জন্য প্রথমে https://guichet.public.lu/en/citoyens/immigration/moins-3-mois/ressortissant-tiers/entree-visa.html ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন ।
তারপর সেখানে দেখতে পাবেন লিখা আছে Go to online services and forms এই লেখাটির উপর ক্লিক করবেন । অতঃপর লুক্সেমবার্গ ভিসা আবেদন ফরম ডাউনলোড হবে ।
এখন ওই লুক্সেমবার্গ ভিসা আবেদন ফরমে আপনার কাছে যা যা তথ্য জানতে চাইবে সবকিছু দিয়ে পূরণ করবেন ।
তারপর সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ বিশ্বস্ত এজেন্সি অথবা দালালের কাছে জমা দিবেন । আশা করি আপনি খুব অল্প সময়ের ভিতরে লুক্সেমবার্গ ভিসা পেয়ে যাবেন ।
লুক্সেমবার্গ বেতন কত টাকা
আমরা জানি পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশের নাম হচ্ছে লুক্সেমবার্গ । তাই নিঃসন্দেহে ইউরোপ সহ সারা বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষের চাকরির বেতনের থেকে এখানে বেতন অনেক বেশি পাওয়া যাবে । তবে একজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ নতুন অবস্থায় লুক্সেমবার্গ গেলে কত টাকা বেতন পাবে সে সম্পর্কে আমাদের প্রত্যেকের ধারণা থাকা উচিত ।
সাধারণত ঘন্টায় হিসাব করে লুক্সেমবার্গ বেতন দেওয়া হয়ে থাকে । সপ্তাহে আপনার সর্ব মোট ডিউটির পরিমাণ ৪০ ঘন্টা অর্থাৎ প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা করে আপনার ডিউটি করতে হবে । তবে মাঝে মাঝে আপনাকে অতিরিক্ত ডিউটি বা ওভারটাইম করার দরকার হতে পারে । কিন্তু অতিরিক্ত ডিউটি বা ওভারটাইমের বিপরীতে আপনাকে আলাদা বেতন দেওয়া হবে ।
সম্পূর্ণ নতুন অবস্থায় বেতন ধরা হয়ে থাকে ২২০৪ ইউরো যা আপনি বাংলাদেশী টাকায় কনভার্ট করলে দাঁড়াবে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকার বেশি । কিন্তু আপনি যদি কোন কাজে অভিজ্ঞ হয়ে এখানে আসেন তাহলে বেতন সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে । আশা করি আমি আপনাদের বিষয়টি বুঝাতে পেরেছি ।
আমাদের শেষ কথা
সম্মানিত পাঠক, আজকের পোস্টটিতে আমরা বর্তমান সময়ের পৃথিবীর শীর্ষ ধনী দেশ লুক্সেমবার্গ যেতে কত টাকা লাগে, কি কি কাগজপত্র লাগে যাওয়ার উপায় এবং বেতন কত টাকা ধরা হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি । আপনি যদি কখনো লুক্সেমবার্গ যেতে আগ্রহী হন তাহলে উল্লেখিত তথ্যগুলো ফলো করুন ।
আশা করি আমার এই পোস্টটি পড়ে আপনার খুবই ভালো লেগেছে । সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার পর আপনি যদি সামান্যতম উপকার পান তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধব ও ফ্যামিলিতে পোস্টটি শেয়ার করুন । তাছাড়া আমার এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার যদি কোন মন্তব্য থাকলে তাহলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন । ধন্যবাদ ।