পূর্ব এশিয়ার অন্যতম উন্নত ও শীর্ষ ধনী দেশের নাম হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া । বর্তমানে বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ ইতিমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়াতে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন । সাধারণত দক্ষিণ কোরিয়া কোন ব্যক্তি গেলে শুরুতেই উচ্চ বেতনে চাকরি করার সুযোগ পায় । তাই আমরা বেশিরভাগ মানুষ সরকারিভাবে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার উপায় সম্পর্কে জানতে চায় ।
মূলত আপনি যদি বেসরকারিভাবে দক্ষিণ কোরিয়া যেতে চান তাহলে প্রচুর টাকা খরচ হবে । আবার দেখা যাবে অনেক সময় আপনাকে দালালের খপ্পরে পড়তে হবে । বর্তমানে দেখা যাচ্ছে বেসরকারিভাবে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়া প্রায় অসম্ভব । তবে আপনার কোন পরিচিত ব্যক্তি যদি ইতিমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া থাকে তাহলে ওনার রেফারেন্স আপনি যেতে পারেন ।
আরও পড়ুন ➝ কানাডা ভিসা পাওয়ার সহজ উপায়
কিন্তু আপনি হয়তো জেনে অবাক হবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ দক্ষিণ কোরিয়াতে সরকারিভাবে নেওয়া হয় । বছরের শুরুতে বিভিন্ন পরীক্ষার আয়োজন করা হয় । ওই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে আপনি যদি পাশ করতে পারেন তাহলে অল্প টাকা খরচ করে সরকারিভাবে দক্ষিণ কোরিয়া যেতে পারবেন ।
এখন আমরা কিভাবে সরকারিভাবে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়া যায় এই বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করব । আপনি যদি কখনো দক্ষিণ কোরিয়া যেতে আগ্রহী হন তাহলে পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন । তো চলুন আমাদের আজকের মূল আলোচনা যাওয়া যাক ।
সরকারিভাবে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার উপায়
আমরা জানি পূর্ব এশিয়ার অন্যতম উন্নত একটি দেশের নাম হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া । এই দেশে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কলকারখানা বাড়িঘর ও প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয় । আর এই সকল কাজে দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়ার দরকার হয় । তাই প্রতি বছর দক্ষিণ কোরিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার শ্রমিক নিয়ে থাকে ।
বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক পরিচালিত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট এন্ড সার্ভিসেস লিমিটেড অর্থাৎ সংক্ষেপে বুয়েসেল । যার মাধ্যমে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ মানুষ দক্ষিণ কোরিয়াতে নিয়োগ দেওয়া হয় । যখন বুয়েসেল কর্তৃক দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার অনলাইন আবেদন শুরু হবে তখন আপনাকে বুয়েসেল অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে আবেদন করতে হবে ।
এই কোম্পানি কর্তৃক সাধারণত দুইটি পরীক্ষার আয়োজন করা হয় । প্রথম পরীক্ষাটি হচ্ছে লিখিত পরীক্ষা এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে মৌখিক পরীক্ষা । দুইটি পরীক্ষার সর্বমোট নম্বর হচ্ছে ২০০ । আপনি যদি দুইটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেন তাহলে আপনাকে নিজ জেলা হাসপাতালে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা বা মেডিকেল ফিট নিশ্চিত করতে হবে ।
তারপর আপনাকে দু মাসের ভিতরে কোরিয়ান ভাষা শিখতে হবে । আপনি যদি আশপাশে তাকান বা নিজ জেলায় দেখেন তাহলে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা কোরিয়ান ভাষা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে । আপনি সেখান থেকে কোরিয়ান বাসায় অভিজ্ঞতা অর্জন করুন । তারপর সরকার কর্তৃক জানিয়ে দেওয়া হবে আপনি কখন দক্ষিণ কোরিয়া যেতে পারবেন ।
সরকারিভাবে দক্ষিণ কোরিয়া যেতে কি কি লাগে
আমরা যদি কখনো সরকারিভাবে দক্ষিণ কোরিয়া যেতে চাই তাহলে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রথমে সংগ্রহ করতে হবে । এখন আপনাদের সুবিধার্থে নিচের তুলে ধরা হলো কি কি কাগজপত্র থাকলে আপনি সরকারি ভাবে দক্ষিণ কোরিয়া যেতে পারবেন ।
- সম্পূর্ণ বৈধ বাংলাদেশী পাসপোর্ট
- জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি
- পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি
- মেডিকেল রিপোর্ট সার্টিফিকেট
- পুলিশ ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট
- কোরিয়ান ভাষা অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট
- কাজের অভিজ্ঞতার প্রমাণপত্র
এখানে যতগুলো কাগজপত্রের নাম তুলে ধরা হয়েছে আপনি যদি সরকারিভাবে কখনো দক্ষিণ কোরিয়া যেতে চান তাহলে প্রথমে ওই সকল কাগজপত্র সংগ্রহ করুন । অতঃপর যখন সরকার কর্তৃক আপনার কাছে কাগজপত্র দেয়া হবে খুব সহজে সেগুলো জমা দিতে পারবেন ।
সরকারিভাবে দক্ষিণ কোরিয়া যেতে কত টাকা লাগে
আমরা অনেকে জানতে চাই সরকারিভাবে দক্ষিণ কোরিয়া যেতে কত টাকা লাগে । এখানে মূলত ভিসার ক্যাটাগরির উপর ভিত্তি করে খরচের পরিমাণ নির্ধারণ করা যেতে পারে । তবে আমরা বেশিরভাগ মানুষ দক্ষিণ কোরিয়া যাই কাজ করে অর্থ উপার্জন করার জন্য । তাই আমাদের দরকার দক্ষিণ কোরিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ।
আরও পড়ুন ➝ কাতার রেস্টুরেন্ট ভিসা বেতন কত
সাধারণত দক্ষিণ কোরিয়া কাজের ভিসা বা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে সরকারিভাবে দক্ষিণ কোরিয়া যেতে খরচ হবে ৫ লাখ টাকা থেকে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত । বর্তমান সময়কার কিছু অনলাইন ট্রাস্টেড সোর্স থেকে মূলত এই খরচের পরিমাণ তুলে ধরা হয়েছে । তবে সময়ের সাথে সাথে এবং প্রয়োজনীয় চাহিদার উপর ভিত্তি করে সরকারিভাবে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার খরচ কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে ।
সরকারিভাবে দক্ষিণ কোরিয়া গেলে বেতন কত টাকা
আমরা যারা সরকারিভাবে দক্ষিণ কোরিয়া গিয়ে কাজ করতে চাই তাদের প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে বেতন কত টাকা ধরা হবে । কারণ দেখা গেল অনলাইনে আবেদন করে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন ও কোরিয়ান ভাষা শিখলেন । অতঃপর ৫ লাখ বা ৬ লাখ টাকা খরচ করে দক্ষিণ কোরিয়া গেলেন । কিন্তু সেখানে গিয়ে আশানুরূপ বেতন পেলেন না তখন আপনার নিঃসন্দেহে হতাশা হওয়া ছাড়া উপায় নেই ।
আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রমবাজার বিশাল যে আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না । তাই এখানে একজন শ্রমিকের সর্বনিম্ন বেতন হচ্ছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা । তাছাড়া প্রতি মাসে আপনাকে অতিরিক্ত ডিউটি বা ওভারটাইম করার সুযোগ দেয়া হবে । যার ফলে আপনার বাড়তি রোজগারের সুযোগ রয়েছে ।
আপনি যদি নির্দিষ্ট পরিমাণ ডিউটি করার পর অতিরিক্ত ডিউটি বা ওভারটাইম করতে পারেন তাহলে দেখা যাবে প্রতি মাসে শুরুতেই ২ লাখ টাকা থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থ উপার্জন করার সুযোগ পাবেন । তবে সময়ের সাথে সাথে আপনার মাসিক বেতন ৩ লাখ বা ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ।
আমাদের শেষ কথা
সম্মানিত পাঠক আজকের পোস্টে আমরা পূর্ব এশিয়ার উন্নত ও শীর্ষ ধনী দেশ দক্ষিণ কোরিয়া কিভাবে সরকারিভাবে যাওয়া যায়, কি কি কাগজপত্র লাগে, খরচ কত হবে এবং বেতন কত টাকা ধরা হবে এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি । আপনি যদি কখনো সরকারিভাবে দক্ষিণ কোরিয়া যেতে চান তাহলে উল্লেখিত তথ্য গুলো ফলো করুন ।
আশা করি আমার এই পোস্টটি পড়ে আপনার খুবই ভালো লেগেছে । সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে আপনি যদি সামান্যতম উপকার পান তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুবান্ধব ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্টটি শেয়ার করুন । তাছাড়া আমার এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার কোন ব্যক্তিগত মন্তব্য থাকলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন । ধন্যবাদ ।