ইউরোপের যতগুলো দেশ রয়েছে তার মধ্যে অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত ও উন্নত দেশ হচ্ছে ক্রোয়েশিয়া । এখানকার জনগণের মাথাপিছু আয় তুলনামূলক অনেক বেশি সেই সুবিধার্থে ক্রোয়েশিয়ার মানুষের জীবনযাত্রার মান অনেক উঁচু পর্যায়ের । তাছাড়া যেহেতু ক্রোয়েশিয়াতে মাথাপিছু আয় বেশি সেই সুবিধার্থে এখানকার মুদ্রার মানও বেশি । তাই আমরা অনেকে ক্রোয়েশিয়া যেতে কত টাকা লাগে এই বিষয়ে জানতে চাই ।
সাধারণত ইউরোপের বেশির ভাগ দেশ উন্নত ও সম্ভ্রান্ত । তাই আমাদের বিশেষ করে যারা তরুণ অথবা তরুণী রয়েছে তাদের মূল টার্গেট হচ্ছে ইউরোপের উন্নত দেশগুলোতে যাওয়া এবং সেখানে গিয়ে উন্নত জীবন যাপন করার পাশাপাশি উচ্চ বেতনে চাকরি করা । আপনি যদি চান বিদেশে গিয়ে অর্থ উপার্জন করবেন এবং উন্নত জীবন যাপন করবেন তাহলে ক্রোয়েশিয়া আসতে পারেন ।
আরও পড়ুন ➝ লুক্সেমবার্গ যেতে কত টাকা লাগে ও বেতন কত
বর্তমানে ক্রোয়েশিয়াতে বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ বসবাস করছেন । কেউ কেউ চাকরি করছেন, পড়াশোনা করছেন অথবা ব্যবসা করছেন । আপনি যদি চান নিজের একটি সফল ও প্রতিষ্ঠিত ক্যারিয়ার গড়তে চান তাহলে অবশ্যই ক্রোয়েশিয়া আসতে পারেন । তবে ক্রোয়েশিয়া আসার পূর্বে আমাদের জানতে হবে ক্রোয়েশিয়া যেতে কত টাকা লাগে ও বেতন কত হবে ।
এখন আমরা কিভাবে বাংলাদেশ থেকে ক্রোয়েশিয়া যাওয়া যায় এই বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব । আপনি যদি এই বিষয়ে জানতে আগ্রহী হন তাহলে পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন । তো চলুন আমাদের আজকের মূল আলোচনায় যাওয়া যাক ।
ক্রোয়েশিয়া যেতে কত টাকা লাগে
আমরা জানি ক্রোয়েশিয়া হচ্ছে সেনজেনভুক্ত একটি দেশ । তাই অন্যান্য দেশের ভিসার দামের তুলনায় ক্রোয়েশিয়ার ভিসার দাম তুলনামূলক একটু বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক । ক্রোয়েশিয়া যেহেতু সেনজেনভুক্ত একটি দেশ তাই এখানকার ভিসা পাওয়া তুলনামূলক অনেক কঠিন । তবে আপনি চাইলে সরকারি ভাবে ক্রোয়েশিয়া যেতে পারেন ।
প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে সরকারিভাবে অসংখ্য মানুষ ক্রোয়েশিয়াতে বিভিন্ন কাজে নেওয়া হয় । আপনি চাইলে ওই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে ক্রোয়েশিয়া আসতে পারেন । তাছাড়া আপনার পরিচিত কোন ব্যক্তি যদি ইতিমধ্যে ক্রোয়েশি অবস্থান করে তাহলে উনার রেফারেন্সে ক্রোয়েশিয়া সেনজেন ভিসা নিয়ে কাজ করতে আসতে পারেন ।
আরও পড়ুন ➝ দুবাই লেবার ভিসা কবে খুলবে
তাছাড়া আপনি চাইলে কোন এজেন্সি অথবা দালালের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ক্রোয়েশিয়া আসতে পারেন । তবে এক্ষেত্রে আপনার খরচের পরিমাণ কিছুটা বেশি হবে । তাই আপনি কিভাবে আসবেন তার ওপর ভিত্তি করে বলা যেতে পারে ক্রোয়েশিয়া যেতে কত টাকা খরচ হতে পারে ।
আমরা সাধারণত ক্রোয়েশিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ক্রোয়েশিয়া টুরিস্ট ভিসা এবং ক্রোয়েশিয়া স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে সেখানে যেতে কত টাকা খরচ হবে এখন আমরা জানব । এই তিনটি ভিসার দাম কত টাকা আপনাদের সুবিধার্থে নিচে তা তুলে ধরা হলো ।
ক্রোয়েশিয়া ভিসার নাম | ক্রোয়েশিয়া ভিসার খরচ |
স্টুডেন্ট ভিসা | ৪ – ৬ লাখ টাকা |
ওয়ার্ক পারমিট ভিসা | ৮ – ১২ লাখ টাকা |
টুরিস্ট ভিসা | ৩ – ৫ লাখ টাকা |
উপরে আলোচিত ক্রোয়েশিয়া স্টুডেন্ট ভিসা, ক্রোয়েশিয়া টুরিস্ট ভিসা এবং ক্রোয়েশিয়া ওয়ার্ক পারমিট ভিসার দাম সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী তুলে ধরা হয়েছে । তবে সরকারিভাবে অথবা পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে এবং এজেন্সি বা দালালের মাধ্যমে যাওয়ার উপর ভিত্তি করে ভিসার দাম কিছুটা কম অথবা বেশি হতে পারে ।
ক্রোয়েশিয়া কাজের বেতন কত
আমরা যদি কখনো বাংলাদেশ থেকে ক্রোয়েশিয়া যেতে চাই তাহলে ক্রোয়েশিয়া কাজের বেতন কত এই বিষয়ে জানার দরকার হবে । কারণ আমরা যদি বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে ক্রোয়েশিয়া আসি কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি আশানুরূপ কোন বেতন নেই তাহলে কিন্তু হলো না । এক্ষেত্রে পরে দেখা যাবে আমরা আরো হতাশ হয়ে যাব ।
আপনি যদি সম্পূর্ণ নতুন অবস্থায় ক্রোয়েশিয়া আসেন তাহলে আপনার বেতন ধরা হবে ৮৪০ ইউরো যা বাংলা টাকায় কনভার্ট করলে দাঁড়ায় ১ লাখ টাকার উপরে । তাছাড়া আপনি যে কাজে ক্রোয়েশিয়া আসবেন তার ওপর যদি অভিজ্ঞতা অর্জন করে আসেন তাহলে শুরুতে ১০০০ ইউরো বা তার বেশি বেতন পাবেন ।
ক্রোয়েশিয়াতে সাধারণত ডিউটির পরিমাণ প্রতিদিন ৮ ঘন্টা এবং সাপ্তাহিক হিসেবে ৪০ ঘন্টা । এর অতিরিক্ত কোন ডিউটি করার দরকার নেই । আপনি যে কাজে ক্রোয়েশিয়া যাবেন সেই কাজে যদি সফলভাবে চালিয়ে যেতে পারেন তাহলে আপনার বেতন সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে ।
ক্রোয়েশিয়া কোন কাজের চাহিদা বেশি
আমরা জানি ক্রোয়েশিয়া ইউরোপের উন্নত ও সম্ভ্রান্ত একটি দেশ । তাই এদেশে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কলকারখানা, বাড়ি তৈরি করা রেস্টুরেন্ট ও বিল্ডিং তৈরির জন্য প্রতিনিয়ত লোক নিয়োগ করা হয় । এখন আমরা জানবো বর্তমানে ক্রোয়েশিয়াতে কোন কাজের চাহিদা বেশি । আপনাদের সুবিধার্থে নিচে তা তুলে ধরা হলো ।
- প্লাম্বার
- ডেলিভারি বয়
- ড্রাইভিং
- টাইলস মিস্ত্রি
- কনস্ট্রাকশন
- মেকানিক
- ইলেকট্রিশিয়ান
এখানে যতগুলো কাজের নাম তুলে ধরা হয়েছে বর্তমানে ক্রোয়েশিয়াতে এই কাজ গুলোর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে । আপনি যদি উল্লেখিত কাজে অভিজ্ঞতা অর্জন করে ক্রোয়েশিয়া আসেন তাহলে শুরুতেই উচ্চ বেতনে চাকরি করতে পারবেন এবং প্রতি মাসে মোটা অংকের বেতন আপনার পরিবারের কাছে পাঠাতে পারবেন ।
ক্রোয়েশিয়া যেতে কি কি লাগে
আমরা যদি বাংলাদেশ থেকে ক্রোয়েশিয়া যেতে চাই তাহলে সবার প্রথমে ক্রোয়েশিয়া ভিসা তৈরি করতে হবে । এই ভিসা তৈরি করার জন্য আমাদের প্রথমে বেশ কিছু কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে । এখন আমরা জানবো কি কি কাগজপত্র থাকলে ক্রোয়েশিয়া যাওয়া যায় । নিচে তা উল্লেখ করা হলো ।
- জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
- পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি
- বৈধ বাংলাদেশী পাসপোর্ট
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ভেরিফিকেশন
- মেডিকেল রিপোর্ট সার্টিফিকেট
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট ফটোকপি
এখানে যতগুলো কাগজপত্রের নাম তোলার ধরা হয়েছে আপনি ক্রোয়েশিয়া ভিসা পেতে হলে সবার প্রথমে এই কাগজগুলো সংগ্রহ করবেন । অতঃপর ক্রোয়েশিয়া ভিসা আবেদন করবেন । তবে একটা বিষয় মনে রাখবেন ক্রোয়েশিয়া ভিসা আবেদন করার পর ভিসা আবেদন ফি দিতে হবে ।
ক্রোয়েশিয়ার নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায়
আমাদের অনেকের স্বপ্ন থাকে ইউরোপের উন্নত দেশের নাগরিক হওয়া । ঠিক তেমনি অনেকের মনে প্রশ্ন হতে পারে কিভাবে ক্রোয়েশিয়ার নাগরিকত্ব পাওয়া যায় । আপনি যদি ক্রোয়েশিয়ার নাগরিকত্ব পেতে চান তাহলে সেখানে সর্বনিম্ন ৮ বছর বৈধভাবে ক্রোয়েশিয়াতে বসবাস করতে হবে । তাহলে আপনি ক্রোয়েশিয়া নাগরিকত্ব পাওয়ার আবেদন করতে পারবেন ।
তাছাড়া আপনি যদি ক্রোয়েশিয়ান কোন নাগরিককে বিয়ে করেন এবং সেখানে সর্বনিম্ন ১ বছর বসবাস করেন তাহলেই আপনি ক্রোয়েশিয়ার নাগরিকত্ব পাওয়ার আবেদন করতে পারবেন । আবার ক্রোয়েশিয়াতে যদি কোন সন্তান হয় এবং সন্তানের বাবা অথবা মা কেউ একজন যদি ক্রোয়েশিয়ার নাগরিক হন নাও হন তাহলেও সন্তানের জন্য মা-বাবা ক্রোয়েশিয়া নাগরিকত্ব পাওয়ার আবেদন করতে পারবেন ।
আমাদের শেষ কথা
আজকের পোস্টে আমরা বর্তমান সময়ে ইউরোপের উন্নত ও সম্ভ্রান্ত দেশ ক্রোয়েশিয়া যেতে কত টাকা লাগে, কি কি কাগজপত্র লাগে, বেতন কত ও নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করেছি । আপনি যদি কখনো বিদেশে গিয়ে অর্থ উপার্জন করতে চান তাহলে অবশ্যই সবার প্রথমে ক্রোয়েশিয়া আসতে পারেন ।
সম্মানিত পাঠক, আশা করি আমার এই পোস্টটি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে । সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে আপনি যদি সামান্যতম উপকার পান তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধব ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্টটি শেয়ার করুন । তাছাড়া আমার এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার কোন মন্তব্য থাকলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন । ধন্যবাদ ।