সম্মানিত পাঠক আপনি কি ক্যাস্টর অয়েলের দাম কত এই বিষয় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? আপনার উত্তরটি যদি হ্যাঁ হয় তাহলে বলব সঠিক জায়গায় এসেছেন । কারণ আজকের পোস্টে আমরা বর্তমান সময়ে বহুল ব্যবহৃত সারা কিছু ক্যাস্টর অয়েল এর দাম সম্পর্কে জানব ।
আমাদের দৈননিন্দ জীবনের সাথে ক্যাস্টর অয়েল ওতপ্রুত ভাবে জড়িত । বিশেষ করে আমাদের মা ও বোনদের পছন্দের একটি উপাদানের নাম হচ্ছে ক্যাস্টর অয়েল । তারা এই ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করার মাধ্যমে ত্বক ও চুলের যত্ন নিয়ে থাকেন ।
ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করার ফলে চুলের গোড়া শক্ত হয় এবং চুল পড়া রোধ হয় । তাছাড়া আপনার যদি কোষ্ঠকাঠিন্য জনিত কোন সমস্যা থাকে তাহলে এই ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করার মাধ্যমে তা নিরাময় করা যায় । এগুলো ছাড়াও আরো অসংখ্য সুবিধা রয়েছে যা আপনি ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করলে উপভোগ করতে পারবেন ।
আরও পড়ুন ➝ গার্নিয়ার ডে ক্রিমের দাম কত
আজকের পোস্টে আমরা ক্যাস্টর অয়েলের দাম কত এবং এর উপকারিতা সহ বেশ কিছু তথ্য সম্পর্কে জানব । আপনি যদি ইতিমধ্যে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হন তাহলে পোস্টটি আপনার জন্য তৈরি করা হয়েছে । তাই অবশ্যই মনোযোগ সহকারে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পোস্টটি পড়তে থাকুন । তো চলুন শুরু করা যাক ।
ক্যাস্টর অয়েল কি?
ক্যাস্টর অয়েল বা রেড়ির তেল একটি প্রাকৃতিক উদ্ভিজ্জ তেল যা রেড়ি বীজ (Castor bean) থেকে প্রস্তুত করা হয় । এটি ঘন, হালকা হলুদ রঙের ও মসৃণ প্রকৃতির হয় । তেলের মূল উপাদান রিসিনোলিক অ্যাসিড, যা এর ঔষধি গুণের প্রধান উৎস । এটি ত্বক ও চুলের যত্নে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় ।
চুল পড়া রোধ ও চুলের বৃদ্ধি বাড়াতে এটি খুব কার্যকর । এছাড়া এটি ত্বক ময়েশ্চারাইজ করে ও শুষ্কতা দূর করে । কিছু ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে এটি ব্যবহৃত হয়। এটি একটি প্রাকৃতিক, বহুমুখী ও নিরাপদ উপাদান হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রিয় ।
ক্যাস্টর অয়েল কিভাবে তৈরি হয়?
ক্যাস্টর অয়েল তৈরি হয় রেড়ি গাছের বীজ থেকে, যা প্রথমে সংগ্রহ করা হয় । বীজগুলো শুকিয়ে এর খোসা আলাদা করা হয় । এরপর বীজ থেকে তেল বের করতে ঠান্ডা বা গরম প্রেসিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। ঠান্ডা প্রেসিং পদ্ধতিতে তেলটি বিশুদ্ধ থাকে ও ঔষধি গুণ বেশি থাকে ।
গরম প্রেসিং পদ্ধতিতে তেল বেশি পরিমাণে পাওয়া যায় কিন্তু গুণমান কিছুটা কমে যায় । প্রেসিং শেষে যে কাঁচা তেল পাওয়া যায় তা ছেঁকে বিশুদ্ধ করা হয় । এতে থাকা রিসিন নামক বিষাক্ত উপাদান অপসারণ করা হয় । এরপর তেলটি পরিশোধন করে স্বচ্ছ ও ব্যবহারের উপযোগী করা হয় ।
শিল্প পর্যায়ে এটি ফিল্টার ও হিট ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে আরও উন্নত করা হয় । বিশুদ্ধ তেল বোতলে ভরে সংরক্ষণ করা হয় । প্রস্তুতকৃত তেল ওষুধ, প্রসাধনী ও শিল্প কাজে ব্যবহৃত হয় । এভাবেই প্রাকৃতিক রেড়ি বীজ থেকে ক্যাস্টর অয়েল উৎপন্ন হয় ।
বিভিন্ন প্রকার ক্যাস্টর অয়েল
ক্যাস্টর অয়েলের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে, যা উৎপাদন পদ্ধতি ও ব্যবহারের উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে ভাগ করা হয় । প্রধান প্রকার গুলো নিচে তুলে ধরা হলো ।
কোল্ড প্রেসড ক্যাস্টর অয়েল (Cold Pressed Castor Oil): রেড়ি বীজ ঠান্ডা অবস্থায় প্রেস করে তৈরি হয়, এটি সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও ত্বক-চুলের যত্নে ব্যবহৃত হয় ।
হট প্রেসড ক্যাস্টর অয়েল (Hot Pressed Castor Oil): তাপ প্রয়োগের মাধ্যমে উৎপাদিত হয়, এতে তেল বেশি পাওয়া যায় তবে গুণমান কিছুটা কমে যায় ।
জ্যামাইকান ব্ল্যাক ক্যাস্টর অয়েল (Jamaican Black Castor Oil): রেড়ি বীজ ভেজে তৈরি করা হয়, যা গাঢ় রঙের এবং চুলের বৃদ্ধিতে খুব কার্যকর ।
হাইড্রোজেনেটেড ক্যাস্টর অয়েল (Hydrogenated Castor Oil): এটি রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়, যা কঠিন অবস্থায় থাকে এবং প্রসাধনী ও শিল্পে ব্যবহৃত হয় ।
অর্গানিক ক্যাস্টর অয়েল (Organic Castor Oil): কীটনাশক বা রাসায়নিক ছাড়াই উৎপন্ন বীজ থেকে তৈরি হয়, যা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ।
রিফাইনড ক্যাস্টর অয়েল (Refined Castor Oil): পরিশোধিত রূপ, যা চিকিৎসা ও প্রসাধনী পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্যাস্টর অয়েল (Industrial Castor Oil): শিল্প কারখানায় লুব্রিকেন্ট, পেইন্ট ও সাবান তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ।
ক্যাস্টর অয়েলের দাম কত
| ব্র্যান্ড | পরিমাণ | দাম (টাকা) | কেনার লিংক |
|---|---|---|---|
| Skin Cafe | 120ml | ৳468 | Shajgoj |
| RiBANA Organic | 200ml | ৳520 | OHSO |
| Cosprof Organic | 100ml | ৳150 | Rokomari |
| Well’s Castor Oil | 70ml | ৳235 | Arogga |
| Well’s Castor Oil | 70ml | ৳500 | Chaldal |
| 100% Natural Castor Oil | 250ml | ৳890 | UK Direct BD |
ক্যাস্টর অয়েলের মান যাচাই প্রক্রিয়া
ক্যাস্টর অয়েলের মান যাচাই প্রক্রিয়া বিভিন্ন ধাপে সম্পন্ন হয় যাতে তেলের বিশুদ্ধতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করা যায় । প্রথমে দৃষ্টিগত পরীক্ষা করা হয় । এই তেলটি স্বচ্ছ, হালকা হলুদ ও কোনো ময়লা বা গন্ধহীন কিনা তা দেখা হয় । এরপর ঘনত্ব (Density Test) মাপা হয়, সাধারণত ২৫°সে তাপমাত্রায় এর ঘনত্ব ০.৯৫–০.৯৬ g/cm³ এর মধ্যে থাকা উচিত । সান্দ্রতা (Viscosity Test) দ্বারা তেলের ঘনত্ব ও তরলতার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় ।
অ্যাসিড মান (Acid Value Test) দ্বারা বোঝা যায় তেলে অবাঞ্ছিত ফ্যাটি অ্যাসিড আছে কি না । আইোডিন মান (Iodine Value Test) তেলের অসম্পৃক্ততার মাত্রা যাচাই করে । সোপিফিকেশন মান (Saponification Value Test) তেলের মান ও ব্যবহার উপযোগিতা নির্ধারণে সাহায্য করে । এছাড়া রিসিনোলিক অ্যাসিড কনটেন্ট টেস্ট দ্বারা মূল কার্যকর উপাদানের পরিমাণ মাপা হয়, যা ৮৫–৯০% থাকা উচিত ।
গন্ধ ও রঙ পরীক্ষা করে নিশ্চিত করা হয় তেলটি বিশুদ্ধ ও অপরিষ্কার পদার্থমুক্ত । আর্দ্রতা পরীক্ষা (Moisture Test) করা হয় যাতে পানি বা আর্দ্রতার উপস্থিতি না থাকে । অবশেষে GC-MS বা HPLC বিশ্লেষণ দ্বারা রাসায়নিক গঠন নিশ্চিত করা হয় । সব মান সঠিক থাকলে তেলটিকে উচ্চমানের ক্যাস্টর অয়েল হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হয় ।
ক্যাস্টর অয়েলের উপকারিতা
ক্যাস্টর অয়েলের উপকারিতা অনেক, যা স্বাস্থ্য, ত্বক ও চুলের জন্য সমানভাবে কার্যকর । এটি চুলের গোড়া শক্ত করে ও চুল পড়া রোধ করে । তেলটি স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে চুলের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটায় । এটি ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে শুষ্কতা ও ফাটাভাব দূর করে ।
চোখের পাতা ও ভ্রু ঘন করতে নিয়মিত ব্যবহার উপকারী । এটি কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে প্রাকৃতিক ল্যাক্সেটিভ হিসেবে কাজ করে । ক্ষত, ফুসকুড়ি বা প্রদাহ নিরাময়ে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণে সহায়তা করে । গাঁটের ব্যথা বা মাংসপেশীর টান কমাতেও এটি কার্যকর ।
প্রসাধনী পণ্যে এটি প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয় । তাছাড়া এটি ত্বকের বার্ধক্য রোধ করে ত্বককে তরুণ ও উজ্জ্বল রাখে । সব মিলিয়ে ক্যাস্টর অয়েল একটি বহুমুখী প্রাকৃতিক তেল যা শরীরের ভিতর ও বাহিরে সমানভাবে উপকার দেয় ।
ক্যাস্টর অয়েল ব্যাবহারের নিয়ম
ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহারের নিয়ম নির্ভর করে আপনি কোন উদ্দেশ্যে এটি ব্যবহার করছেন তার উপর । চুলের যত্নে ব্যবহারের আগে তেলটি হালকা গরম করে মাথার ত্বকে আলতোভাবে মালিশ করতে হয় । এরপর ৩০-৬০ মিনিট রেখে মৃদু শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হয় । এটি সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করা ভালো ।
ত্বকের যত্নে ঘুমানোর আগে অল্প পরিমাণ তেল মুখে বা শুষ্ক স্থানে লাগিয়ে রাতে রেখে সকালে ধুয়ে নিতে হয় । কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে চিকিৎসকের পরামর্শে অল্প পরিমাণ (সাধারণত ১-২ চা চামচ) মুখে গ্রহণ করা যায় । চোখের পাতা ও ভ্রু ঘন করতে তুলার কাঁটা দিয়ে সামান্য তেল লাগাতে হয় ।
গাঁটের ব্যথা বা মাংসপেশীর টান কমাতে গরম তেল দিয়ে ম্যাসাজ করা কার্যকর । ঠোঁট ফাটা বা গোড়ালি ফাটা নিরাময়ে রাতে ঘুমানোর আগে তেল লাগিয়ে রাখতে হয় । কোনো অ্যালার্জি বা জ্বালাভাব হলে ব্যবহার বন্ধ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত ।
ক্যাস্টর অয়েল ব্যাবহারে সতর্কতা
ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহারে কিছু সতর্কতা মেনে চলা জরুরি, যাতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না হয় । প্রথমত, ব্যবহারের আগে ত্বকের একটি ছোট স্থানে প্যাচ টেস্ট করে অ্যালার্জি আছে কি না পরীক্ষা করা উচিত । গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীদের এটি অভ্যন্তরীণভাবে গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন ।
অতিরিক্ত পরিমাণে মুখে খেলে বমি, পেট ব্যথা বা ডায়রিয়া হতে পারে । চোখে বা কানে সরাসরি তেল না লাগানোই ভালো । তেল ব্যবহারের আগে তা বিশুদ্ধ ও মানসম্মত কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে । দীর্ঘমেয়াদে অতিরিক্ত ব্যবহার করলে ত্বকে তৈলাক্ত ভাব বা রোমকূপ বন্ধ হতে পারে ।
শিশুদের ক্ষেত্রে এটি খুব অল্প পরিমাণে ও সতর্কভাবে ব্যবহার করা উচিত । কোনো প্রকার জ্বালাভাব, ফুসকুড়ি বা লালচে দাগ দেখা দিলে ব্যবহার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করতে হবে । ঠান্ডা, শুষ্ক ও অন্ধকার স্থানে তেল সংরক্ষণ করা উচিত । সর্বদা চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করাই নিরাপদ ।
ক্যাস্টর অয়েল কোথায় পাওয়া যায়
ক্যাস্টর অয়েল এখন সহজেই বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যায় । এটি স্থানীয় ওষুধের দোকানে (ফার্মেসি) বিক্রি হয়, বিশেষ করে প্রসাধনী ও হেলথ সেকশনে । বড় সুপারশপ যেমন আগোরা, মিনাবাজার বা মেহনাজে এটি সাধারণত প্রসাধনী পণ্যের পাশে রাখা থাকে । অনলাইন শপ যেমন দারাজ, আজকেরডিল, চলো শপ বা অ্যামাজনেও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ক্যাস্টর অয়েল পাওয়া যায় ।
বিউটি প্রোডাক্ট স্টোরে (যেখানে হেয়ার অয়েল, স্কিন কেয়ার পণ্য বিক্রি হয়) এটি অন্যতম জনপ্রিয় আইটেম । কিছু হারবাল ও আয়ুর্বেদিক দোকানেও বিশুদ্ধ ও অর্গানিক ক্যাস্টর অয়েল মজুদ থাকে । ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রাম পেজের মাধ্যমে ছোট উদ্যোক্তারাও এটি বিক্রি করেন ।
শিল্প বা ম্যাসাজের কাজে ব্যবহৃত বড় প্যাকেজ তেল পাইকারি বাজারেও পাওয়া যায় । তাই চুল, ত্বক বা স্বাস্থ্যগত যেকোনো ব্যবহারের জন্য এটি অনলাইন ও অফলাইন উভয় জায়গায় সহজলভ্য ।
আমাদের শেষ কথা
আজকের পোস্টে আমরা বর্তমান সময়ে ব্যবহৃত সেরা কিছু ক্যাস্টর অয়েলের দাম সম্পর্কে জেনেছি । তাছাড়া কিভাবে ক্যাস্টর অয়েল তৈরি হয়, সুযোগ সুবিধা এবং ব্যবহার করার নিয়ম সম্পর্কে জেনেছি । আপনি যদি ক্যাস্টর অয়েলের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা উপভোগ করতে চান তাহলে উল্লেখিত ক্যাস্টর অয়েল গুলো ব্যবহার করুন ।
আশা করি আমার এই পোস্টটি পড়ে আপনার খুবই ভালো লেগেছে । সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে আপনি যদি সামান্যতম উপকার পান তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধব ও ফ্যামিলিতে পোস্টটি শেয়ার করুন । তাছাড়া আমার এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার কোন মন্তব্য থাকলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন । ধন্যবাদ ।