যুক্তরাজ্য ইউরোপের অন্যতম শীর্ষ একটি ধনী দেশের নাম । এখানকার জনগণের মাথাপিছু আয় অনেক বেশি এবং সেই সুবিধার্থে মুদ্রার মান অনেক বেশি । তাছাড়া এখানে বসবাস করা প্রতিটি যুক্ত রাজ্যের নাগরিক অথবা বৈদেশিক নাগরিকের জীবনযাত্রার মান অতি উচ্চ পর্যায়ের ।
আমাদের বাংলাদেশ উন্নয়নশীল একটি দেশ । এখানে অসংখ্য মানুষ শিক্ষিত রয়েছে । কিন্তু শিক্ষিতর তুলনায় পর্যাপ্ত পরিমাণে চাকরির ব্যবস্থা নেই । আপনি যদি সরকারি কোন চাকরি নিতে চান তাহলে ঘুষ দিতে হবে । আপনার মামা খালু না থাকলে কিন্তু চাকরি পাবেন না । তাই অনেক যুবক-যুবতী সরকারি চাকরির আশা বাদ দিয়ে বিদেশ যাওয়ার চিন্তা ভাবনা করে ।
একজন বেকার ব্যক্তি সমাজে কতটুকু অবহেলিত তা ওই ব্যক্তি বুঝতে পারে । যখন কোন ব্যক্তি বেকার থাকে তখন সে পরিবার ও সমাজের কাছ থেকে বারবার আঘাত পেতে থাকে । তারপর সে আঘাত সহ্য করতে না পেরে বিদেশ যাওয়ার জন্য রাজি হয় । মূলত পরিবারের চাপে উচ্চ বেতন পাওয়ার আশায় বিদেশ যাওয়া ।
আরও পড়ুন ➝ কাতার রেস্টুরেন্ট ভিসা বেতন কত
আমাদের বাংলাদেশের যুবক ও যুবতীদের অর্থ উপার্জনের জন্য অন্যতম টার্গেট হচ্ছে ইউরোপের দেশগুলো । বর্তমানে ইউরোপের অনেক উন্নত দেশ রয়েছে । কিন্তু সেই সকল দেশ থেকে অতি উচ্চ পর্যায়ের উন্নত দেশের তালিকায় রয়েছে যুক্তরাজ্য । এখানে আপনি যদি ওয়ার্ক পারমিট ভিসাতে যান তাহলে অনেক টাকা উপার্জন করতে পারবেন
আপনি যদি ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন যুক্তরাজ্য কাজের ভিসাতে যাবেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য তৈরি করা হয়েছে । তাই পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন । তো আর দেরি না করে চলুন আমাদের আজকের মূল আলোচনাতে যাওয়া যাক ।
যুক্তরাজ্য ওয়ার্ক পারমিট ভিসা
বর্তমানে যুক্তরাজ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরির উপর ভিত্তি করে ভিসা পাওয়া যায় । তবে আমরা বেশিরভাগ বাংলাদেশী মানুষ যুক্তরাজ্য ওয়ার্ক পারমিট ভিসা খুজে থাকি । এর কারণ হচ্ছে আমরা যুক্তরাজ্যে যাচ্ছি শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনের জন্য । তাই আমাদের ওয়ার্ক পারমিট ভিসার দরকার ।
এখন অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন যে ভাই যুক্তরাজ্য ওয়ার্ক পারমিট ভিসার খরচ কত টাকা? হ্যাঁ আপনি যদি কখনো যুক্তরাজ্য কাজের উদ্দেশ্যে যেতে চান তাহলে এই বিষয়ে জানা খুবই জরুরী । কারণ আপনি যদি কোন এজেন্সি অথবা দালালের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের ভিসা প্রসেসিং করান তাহলে কিন্তু ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ।
আপনি যদি এজেন্সি অথবা দালালের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নেন তাহলে খরচ হবে ৬ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকা । তবে আপনার পরিবারের কোন ব্যক্তি যদি যুক্তরাজ্য থাকে তাহলে আপনি আরো অনেক কম খরচে যেতে পারবেন । কিন্তু সেখানে যদি আপনার কেউ না থাকে তাহলে আপনি এজেন্সি বা দালাল দিয়ে ৬-১০ লক্ষ টাকা খরচ করে যুক্তরাজ্যে আসতে পারেন ।
যুক্তরাজ্য ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন
আমরা যদি যুক্তরাজ্যে গিয়ে কাজ করতে চাই তাহলে অবশ্যই আমাদের একটি ভিসার দরকার হবে । আমরা ভিসা ব্যতীত কখনোই যুক্তরাজ্যে যেতে পারবো না । আপনি যদি ভুলক্রমে কখনো ভিসা ব্যতীত যুক্তরাজ্যে চলে আসেন তাহলে অবশ্যই কোনো না কোনো সময় আপনাকে পুলিশ গ্রেফতার করবে । অতঃপর পুলিশ আপনাকে জেলে প্রেরণ করে দিবে ।
তাই আপনাকে অবশ্যই যুক্তরাজ্যে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা বলুন অথবা অন্য যে কোন বিষয় বলুন না কেন আপনাকে ভিসা নিয়ে এখানে আসতে হবে । এখন আমরা যদি যুক্তরাজ্যের ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন করি তাহলে কি কি ডকুমেন্ট লাগবে তা সম্পর্কে নিম্নে তুলে ধরা হলো ।
- বৈধ পাসপোর্ট
- ভিসা আবেদন ফি
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- পড়াশোনার সার্টিফিকেট
- চাকরির অফারের চিঠি
- ফিঙ্গারপ্রিন্ট সাবমিশন
- ইংরেজি বিষয়ে পারদর্শী
- পুলিশ ভেরিফিকেশন
- কাজের অভিজ্ঞতার প্রমাণপত্র
আপনি যদি কখনো যুক্তরাজ্যে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা বা কাজের ভিসায় আবেদন করতে চান তাহলে সবার প্রথমে উপরোক্ত ডকুমেন্টগুলো সংগ্রহ করবেন । অন্যথায় আপনি কোনক্রমেই এইসব তথ্য ছাড়া ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন না ।
যুক্তরাজ্যে সর্বনিম্ন বেতন কত
আমাদের অনেক ভাই ও বোনের প্রশ্ন যুক্তরাজ্যে সর্বনিম্ন কত টাকা বেতন পাওয়া যায়? হ্যাঁ, আমরা যদি কখনো যুক্তরাজ্যে কাজের জন্য যাই তাহলে কত টাকা বেতন পাব সে সম্পর্কে জেনে নিব । কারণ আমরা যদি এত বেশি টাকা খরচ করে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করি তাহলে সেখানে গিয়ে যদি কম টাকা বেতন পাব তাহলে কিন্তু হলোনা ।
আরও পড়ুন ➝ কানাডা ভিসা পাওয়ার সহজ উপায়
যুক্তরাজ্যের সাধারণত ঘন্টায় হিসাব করে বেতন দেয়া হয় । এখানে বিভিন্ন বয়সের ব্যক্তিদের জন্য আলাদা আলাদা বেতনের ক্যাটাগরি নির্ধারণ করে দেওয়া রয়েছে । এখন আপনি কোন ক্যাটাগরির আওতাভুক্ত এবং আপনার বেতন কত টাকা হবে তা নিচের ছক থেকেই বুঝতে পারবেন ।
ব্যক্তির বয়স | কাজের দাম (ঘণ্টা) |
১৬-১৭ বছর | ৪.৮১ পাউন্ড |
১৮-২০ বছর | ৬.৮৩ পাউন্ড |
২১-২২ বছর | ৯.১৫ পাউন্ড |
২৩+ বছর | ৯.৫০ পাউন্ড |
যুক্তরাজ্যে ১৬-১৭ বছরের মানুষের বেতন ৪.৮১ পাউন্ড, ১৮-২০ বছরের বেতন ৬.৮৩ পাউন্ড, ২১-২২ বছরের বেতন ৯.১৫ পাউন্ড এবং ২৩ বছর বা তারও বেশি অধিক বেতন ৯.৫০ পাউন্ড প্রতি ঘন্টা দেওয়া হয়ে থাকে । বর্তমানে প্রতি পাউন্ড সমান বাংলাদেশি ১৩৭ টাকার ও বেশি । তাহলে বুঝতেই পারছেন প্রতি ঘন্টায় কত টাকা পাওয়া যায় ।
একজন ২৩ বছরের অধিক বয়সি ব্যক্তি প্রতি মাসে ২ লক্ষ টাকা থেকে ৩ লক্ষ টাকা যুক্তরাজ্য থেকে কাজ করে উপার্জন করতে পারে । তবে সর্বনিম্ন উপার্জন করতে পারে একজন ব্যক্তি ৮০০০০ টাকা থেকে শুরু করে ১ লক্ষ টাকার ভিতরে ।
যুক্তরাজ্যে কোন কাজে চাহিদা বেশি
আমরা সকলেই জানি যুক্তরাজ্য একটি শীর্ষ উন্নত দেশের নাম । এখানে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোম্পানি, রেস্টুরেন্ট ও হসপিটাল রয়েছে । এ সকল প্রতিষ্ঠানে প্রতি বছর লাখ লাখ বিদেশি নাগরিক নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে । এখন যুক্তরাজ্যে কোন কোন কাজের চাহিদা বেশি রয়েছে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো ।
- হসপিটাল নার্স
- নির্মাণ শ্রমিক
- ইলেকট্রিশিয়ান
- প্লাম্বার কর্মী
- রেস্টুরেন্ট কর্মী
আপনি যদি উপরোক্ত ক্যাটাগরিতে কাজ করতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে খুব অল্প সময়ে যুক্তরাজ্যে কাজ পেয়ে যাবেন । কারণ বর্তমানে এই সকল ক্যাটাগরিতে যুক্তরাজ্যে বিপুল পরিমাণে লোক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে ।
আমাদের শেষ কথা
আজকের পোস্টে আমরা ইউরোপের অন্যতম শীর্ষ ধনী যুক্তরাজ্যের ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছি । এখানে যেতে কত টাকা লাগে, ভিসা আবেদন করতে কি কি ডকুমেন্ট লাগে এবং কি কি কাজে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে সে সম্পর্কেও জেনেছি । আপনি যদি কখনো যুক্তরাজ্যে যেতে আগ্রহী থাকেন তাহলে উপরোক্ত তথ্য ফলো করে সেখানে যেতে পারেন ।
সুপ্রিয় পাঠক, আশা করি আমার এই পোস্টটি পড়ে আপনার খুবই ভালো লেগেছে । সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার পর আপনি যদি সামান্যতম উপকৃত হন তাহলে আমার এই পোস্ট লিখতে যতটুকু কষ্ট হয়েছে তা সার্থক হবে বলে আমি মনে করি । আমার এই পোস্টটি যদি ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুবান্ধবদের সাথে শেয়ার করবেন । ধন্যবাদ ।